Friday 2 September 2016

বেরিয়ে পড়লাম যশোধরা,

বেরিয়ে পড়লাম যশোধরা,
অকাতরে ঘুমোচ্ছ তুমি,এই তো সুযোগ। 
নিঃশব্দে আলমারি খুলে বার করে নিলাম ,
এখনও না খরচা হওয়া সংসার খরচের কটা টাকা। 
ব্যাগে গুছিয়ে নিলাম সামান্য কটা জামা,
বেরিয়ে পড়লাম যশোধরা, আমি আর ফিরব না।
ভোরের হাওড়া স্টেশন, টিকিট কাউন্টারের জানলা দিয়ে বাড়িয়ে দিলাম হাত,
একটা টিকিট দিন তো, সবথেকে দূরের একটা টিকিট- 
পাগল ঠাওরালো কি না জানি না, ছুঁড়ে দিল একটা টিকিট, 
বদলে খরচা হয়ে গেল কড়কড়ে দুশো টাকা।
না জানি কতক্ষণ ধরে ছুটেছে ট্রেনটা, আচমকা ক্লান্ত হয়েই বুঝি দাঁড়িয়ে পড়ল। 
মুখ বাড়িয়ে দেখি একটা ছোট্ট স্টেশন,
লাল কাঁকড় মাটির প্লাটফর্ম, দূরে একটা শিমুল গাছ রক্তবর্ষণ করছে। 
বুঝলাম, এটাই আমার গন্তব্য।
আধা গঞ্জ, অদূরেই একটা ছোট নদী ছলাৎ ছলাৎ । 
নীল আকাশ, সোনা রোদ, তপ্ত মাটির গন্ধ ওলা বাতাস, 
লেখাপড়া না জানা কালোকোলো খেটে খাওয়া মানুষজন। 
সব ছাপিয়ে বড় কষ্ট, বড় কষ্ট, তোমার জন্য যশোধরা। 
কি করবে তুমি? সবকটা টাকা তো আমার কাছে-
সংসার চলবে কি করে? আর তোমার পেটর ভ্রূণটা?
মাটি মাখা উলঙ্গ শিশুগুলো যে হঠাৎ মনে করিয়ে দিল তার কথা।
কি করলাম। এ আমি কি করলাম। 
ভাঙাচোরা ওভারব্রীজে হাঁটু মুড়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি আমি। 
এখানে কেউ বাংলা বোঝে না, কেউ এগিয়ে আসবে না সান্তনা দিতে। 
কি করলাম? এ আমি কি করলাম?
একটা উষ্ণ হাতের স্পর্শে চমকে উঠে দেখি,
বৃদ্ধ স্টেশন মাস্টার, সস্নেহ বললেন,“লওট যা বেটা। রাত পৌনে দশটার ট্রেন কলকাত্তা যায়। 
লওট যা।
প্রচণ্ড শীত, আলোয়ান মুড়ি দিয়ে অপেক্ষা করছি,
ঐ আসছে আমার ট্রেন, এক দুর্দম রাক্ষসের মত, ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। 
তোমার কাছে যশোধরা। 
কি যে হল, চলন্ত ট্রেনের সামনে ছুঁড়ে দিলাম আমার অন্তিম বাঁধন। 
বাঁধন ছেঁড়া বিবাগী আমি। 
ফিরব না আর যশোধরা। 
আমি আর ফিরব না। 


No comments:

Post a Comment