Saturday 29 April 2017

শ্যামাকালী

শ্যামাকালী (পর্ব- ১)
একি দেখছে শ্যামা? বাবা? বাবা ওর সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে? কিন্তু বাবার একি সাংঘাতিক অবস্থা? রুধিরস্নাত দেহ, উদরের মধ্যস্থলে আড়াআড়ি একটা বিশাল ক্ষত, সেখান থেকে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে ঝুলছে, বাবা কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না। বের হবে কি করে? গলার নলি কাটা যে। বাবা আকুল ভাবে কিছু বলতে চাইছে, দুই চোখে তীব্র আর্তি, কিন্তু পারছে না। এত রক্ত? এত রক্তক্ষরণ হলে বাবা মরে যাবে যে। “নাআআআআ” বলে চিৎকার করে উঠল শ্যামা।
“শ্যামা? শ্যামা? ওঠো। কি হয়েছে? দুঃস্বপ্ন দেখলে কি?” পঞ্চানন জোরে জোরে ঝাঁকাতে লাগলেন তার নিদ্রিতা অথচ ক্রন্দনরতা স্ত্রীকে। চোখ খুলেই পঞ্চাননকে আঁকড়ে ধরল শ্যামা। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। পৃথিবীতে এই একজনই তো আছে, যে শ্যামাকে ভালবাসে। কেউ কোনদিন ভালবাসেনি শ্যামাকে। জন্ম থেকেই ব্রাত্য শ্যামা।

শ্যামার জন্মের পূর্বে, ওদের গ্রামের বৃদ্ধ হরিদেব ঠাকুর নাকি ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন, বংশের মুখ উজ্জ্বল করা সন্তান প্রসব করতে চলেছেন, শ্যামার জননী। রায় বংশের ধারক এবং বাহক, যাকে বলে কুলতিলক। এই সন্তানের হাত ধরেই নাকি অমরত্ব পেতে চলেছে শ্যামার পিতা কৃষ্ণদেব রায়।  হরিদেব ঠাকুরের বচন নাকি অব্যর্থ, কখনও মিথ্যা হয়নি। শ্যামার পিতা ভেবেছিলেন, কুলতিলক অর্থাৎ এক যুগন্ধর পুত্র সন্তান প্রসব করতে চলেছেন, ওনার স্ত্রী। সময় ষোড়শ শতক, স্থান আদিসপ্তগ্রামের নিকট এক ছোট্ট গ্রাম স্বপ্নগোপালপুর । শ্যামার পিতা সেখানে সর্বজন পূজিত। স্বপ্নগোপালপুরের বিখ্যাত বৃন্দাবন রায়ের মন্দিরের মূল উপাসক শ্যামার পিতা। বৃন্দাবন রায় অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরটিও শ্যামাদেরই এক পূর্বপুরুষ নির্মাণ করেছিলেন। শোনা যায় প্রায় আড়াই তিনশ বৎসর পূর্বে, সেই আদি পুরুষ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে না জানি কোথা থেকে এখানে এসে হাজির হয়েছিলেন। গন্তব্য ছিল কোথায়, তাও অজ্ঞাত। তখন কোথায় স্বপ্নগোপালপুর  কোথায় কি? গোটা অঞ্চলই আবৃত ছিল ঘন জঙ্গলে। পাশ দিয়েই বয়ে যেত পতিতপাবনী গঙ্গা। পথশ্রমে ক্লান্ত স্বামী স্ত্রী, গঙ্গায় ডুব গেলে, দুটি চিঁড়ে মুড়ি খেয়ে, এক বিশাল বট গাছের তলায় নিদ্রা যান। কথিত আছে, নিদ্রিত অবস্থায় যুগলে একি স্বপ্ন দেখেন, যে এক ঘন কৃষ্ণবর্ণ শিশু এসে ওনাদের ধুতি এবং শাড়ি ধরে টানছে, আর কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “আর কতদিন আমাকে মাটি চাপা থাকতে হবে? মাবাবা আমার খিদে লেগেছে।” ঘুম ভাঙতেই সেই শিশু নির্দিষ্ট অঞ্চল খুঁড়তে শুরু করেন ওনারা, এবং বাস্তবিক মাটি খুঁড়ে বার হয়, এক কষ্টি পাথরের কৃষ্ণ মূর্তি। স্বপ্নে পাওয়া গোপাল, তাই সংলগ্ন অঞ্চলের নাম হয় স্বপ্নগোপালপুর। নিকটবর্তী জমিদার বাসুদেব দত্তমশাইয়ের পূর্বপুরুষদের তত্ত্বাবধান তথা পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে এই মন্দির। রায় বংশের পুত্র তাই এখানে শ্রীকৃষ্ণের নামও বৃন্দাবন রায়।
শ্রীশ্রী   বৃন্দাবন রায়ের প্রধান উপাসক কৃষ্ণদেব রায় যখন জানতে পারলেন, যে ওনার স্ত্রী এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তখন বলাইবাহুল্য উনি চূড়ান্ত আশাহত হন। কন্যা? কন্যা কি করে বংশের ধারক ও বাহক হয়? কন্যা কি করে বংশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে? এই কন্যার হাত ধরে উনি অমরত্ব লাভ করবেন? হা হতোস্মি। হতাশার থেকে জন্ম নেয় ক্রোধ।  কৃষ্ণদেব নাকি নিজের প্রথম সন্তানের মুখদর্শন করতে সম্মত ছিলেন না, যাই হোক সম্মিলিত অনুরোধে, মেয়ের মুখ দেখতে গিয়ে উনি আরও ব্যথা পেলেন। এ কে? কার সন্তান? রায় বংশে সকলেই গৌরবর্ণ, তীক্ষ্ণ নাসা, উচ্চ কপাল তথা দীর্ঘ দেহি। কিন্তু এ কি জন্মেছে? শিশুর গাত্র বর্ণ ঘোর কৃষ্ণ, মুখশ্রীও তথৈবচ। বেঁকা বেঁকা পা দুটি জানিয়েই দিচ্ছে, যে এ মেয়ে বেশি লম্বা হবে না। তীব্র বিতৃষ্ণায় কৃষ্ণদেব রায় কন্যার নাম রাখলেন, “শ্যামাকালী”। বৈষ্ণব বংশে কালী এক অতি তুচ্ছা দেবী মাত্র। নিছক অপাংক্তেয়।

জ্ঞান হওয়া ইস্তক শ্যামা জানত, সে অবাঞ্ছিত। পিতা জীবনে শ্যামার সাথে একটি বাক্যবিনিময়ও করেননি। অথচ শ্যামার পরের দুই ভাই কিন্তু পিতার অপার স্নেহ লাভ করেছে। দুই ভাইয়ের সাথে শ্যামাকেও শাস্ত্র চর্চার সুযোগ দেওয়া হয়। কৃষ্ণদেব রায়ের শেষ আশা ছিল, হয়তো শ্যামা এদিকে কোন  কোন অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেবে। কোন নতুন পুঁথি লিখে বংশের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে যাবে। কিন্তু সেখানেও শ্যামা ব্যর্থ হয়।  শ্যামার অন্যান্য সহচরীদের পটাপট বিয়ে হয়ে যেতে লাগল, কিন্তু শ্যামার আর বিয়ে হয় না। কে নেবে, ঐ ঘোর কৃষ্ণবর্না খর্ব অথচ স্থূলাঙ্গী কন্যাকে? মাঝে মাঝে দুপুর বেলা যখন বৃন্দাবন রায়ের মন্দির দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকত, শ্যামা লুকিয়ে গিয়ে  বৃন্দাবন রায়কে প্রশ্ন করত, “তুমিও কালা, আমিও। তুমি সর্বজন পূজ্য আর আমি কেন নই? যারা তোমার উপাসনা করে, তারাই আমায় ঘৃণা করে কেন? বল প্রভু?” কিন্তু পাথরের বিগ্রহ বরাবর নীরবই থাকত।
শ্যামার যখন প্রায় তের বছর বয়স, তখন নবদ্বীপ নিবাসী বাবু বনবিহারী ভট্ট তাঁর ভাগ্নের জন্য শ্যামার কর প্রাথনা করলেন। কানাঘুষো শোনা গেল, বদলে বেশ কয়েকঘর যজমানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলন, শ্যামার পিতা। বিয়ের পর নৌকা করে নবদ্বীপ পাড়ি দিল পঞ্চানন আর শ্যামা। ঘোমটার আড়াল থেকে অশ্রুসজল চোখে শ্যামা দেখছিল, বাবার চোখ শুকনো খটখটে। নৌকায় ওঠার আগে, যুগলে প্রনাম করল, কৃষ্ণদেব রায়কে। হাসি মুখে আশীর্বাদ করলেন, কৃষ্ণদেব রায়। শ্যামা আর থাকতে পাড়ল না, “বাবা গো!!” বলে আঁকড়ে ধরল নিজের পিতাকে। নাই দেখতে পারুন উনি শ্যামাকে, শ্যামা যে বড় ভালোবাসে তাঁর বাবাঠাকুরকে। দৃশ্যমান আড়ষ্টতার সাথে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কৃষ্ণদেব রায় হাত নেড়ে বরবধূকে ইশারা করলেন, নৌকায় চাপার। মর্মাহত শ্যামা নীরবে নৌকায় উঠলেও পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল, “ বড় ভুল করলে হে কৃষ্ণ। মাশুল গোনার জন্য প্রস্তুত হও। আমার ভবিষ্যৎ বাণী কখনও মিথ্যা হয় না। ঐ তোমার কুলতিলক।” শ্যামা ঘোমটা সরিয়ে দেখে দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ ঠাকুর মশাই, লাঠিতে ভর দিয়ে এসেছেন, শ্যামাকে বিদায় জানাতে।

শ্যামাকালী (পর্ব- ২)
তের বছরের শ্যামাকালী আর উনিশ বছরের পঞ্চাননের ফুলশয্যা, শ্বশুর বাড়িতে পদার্পণ করেই শ্যামা বুঝতে পেরেছিল, এখানেও খুব একটা স্বাগত নয় সে। বনবিহারী ভট্টের স্ত্রী চার পুত্র- পুত্রবধূ, গোটা দশেক নাতিনাতনী নিয়ে বিশাল পরিবার, সেখানে পিতৃমাতৃহীন ভাগ্নে পঞ্চানন নেহাতই পরিচারকতুল্য। তার স্ত্রী হিসেবে শ্যামার গ্রহণযোগ্যতা কতটা হতে পারে তা অননুমেয় নয়। ফুলশয্যার রাত্রে পঞ্চানন ও তাই বলেছিল শ্যামাকে, “হ্যাঁ গা তোমার বাপমায়ের কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই। হাত পা বেঁধে  এত সুন্দর মেয়েটাকে জলে ভাসিয়ে দিল গা?” সুন্দর! শ্যামা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনি, ঘোমটা সরিয়ে তাকিয়ে দেখে পঞ্চাননের মুখে একটুও শ্লেষ বা বিদ্রুপের ছায়াও নেই। নিতান্ত সহজ সরল একজোড়া টানাটানা চোখ, ঘন আঁখিপল্লব গভীর সহমর্মিতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্যামার দিকে। শ্যামা করুণ হেসে বলেছিল, “আমার মত বাপে খেদানো মায়ে তাড়ানো মেয়েকে উদ্ধার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।” পঞ্চানন আরো করুণ ভাবে বলেছিল, “হোক না। খেদাক না, তবু তো তোমার মা-বাবা আছেন। আর আমাকে দেখ, জন্মের আগে বাবা নিরুদ্দেশ, গর্ভবতী অবস্থায় মাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল আমার দাদু-ঠাকুমা। মামাদের গোয়ালের পাশে ছোট্ট আঁতুড় ঘরে আমার জন্ম দিয়ে মাও...। সেই থেকে মামার বাড়িতেই পড়ে আছি। লেখাপড়াও শিখিনি কিছু না। বামুনের ছেলে হয়ে ফাইফরমাশ খাটি, গরু বাছুরের দেখাশোনা করি। হাট বাজার করি...। তোমাকেও খাটতে হবে গো। পঞ্চার বউকে এরা বসিয়ে খাওয়াবে না।”

এদিকে যখন স্বপ্নগোপালপুরের শ্যামার সাথে গভীর প্রেমবন্ধনে জড়িয়ে যাচ্ছে নবদ্বীপের পঞ্চানন, ও দিকে তখন বাংলার আফগান সুলতান সুলেমান কারনানীর কন্যা জেব-উন্নিসার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, কলিঙ্গ-উৎকল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট গজপতি মুকুন্দদেবের প্রধান সেনাপতি শ্রী রাজীবলোচন রায়। সুলেমান কারনানী ছিলেন এক অতি বিচক্ষণ শাসক। সুলতান উপাধি নিলেও উনি নিজস্ব মুদ্রা চালু করেননি। ওনার জমানায় জুম্মা বারে মসজিদে মসজিদে তৎকালীন বাদশাহ আকবরের নামে খুৎবা  পড়া হত। ওনার বড় শখ ছিল কলিঙ্গকে বঙ্গদেশের অন্তর্ভুক্ত করার। সেই উদ্দেশ্যে যতবারই মহারাজ গজপতি মুকুন্দদেবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, ততবারই পর্যুদস্ত হয়েছেন গজপতি মুকুন্দদেবের সেনাপতি রাজীবলোচন রায়ের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, বীরত্ব তথা রণ কৌশলের কাছে। অবশেষে ত্রিবেণীর যুদ্ধে পরাস্ত হবার পর সুলতান সুলেমান কারনানী এক ফন্দি আঁটলেন। উনি খবর নিয়ে দেখেছিলেন যে রাজীবলোচনের স্ত্রী শৈশবেই পরলোক গমন করে এবং তারপর আর দ্বিতীয়বার দারপরিগ্রহ করেননি রাজীব। বিবাহযোগ্যা হিন্দু মেয়েদের বয়স সাধারণত সাত আট বা খুব জোর দশ। ঐ টুকু বাচ্ছা মেয়ে আর যাই হোক পচিশ বছরের রাজীবলোচনের মানসী হতে পারে না।
ত্রিবেণীর যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি প্রস্তাব আলোচনার জন্য রাজীবলোচনকে নিজের শিবিরে আমন্ত্রণ জানালেন সুলতান। শুদ্ধ উৎকলী ব্রাহ্মণের হাতে তৈরি ভোজন দিয়ে তাঁকে আপ্যায়ন করলেন, সুলতান। ভোজনান্তে যখন শর্তাবলী নিয়ে দরদস্তুর চলছে, শিবিরের পর্দা সরিয়ে প্রবেশ করল এক অপরূপা নারী। বয়স বছর উনিশ। তপ্ত কাঞ্চন বর্ণ, তুলি দিয়ে আঁকা একজোড়া চোখ, যার মণির রঙ হাল্কা সবুজ মেশানো নীল। গোটা শরীর আবৃত, মস্তকে খাস ঢাকাই মসলিনের স্বচ্ছ ওড়না। যার রঙ অবিকল নারীর চোখের মণির মত। এ নারী যে মধ্যপ্রাচ্যের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজীবলোচনের চোখের পলক পরছিল না। সুলতান সুলেমান, নীরবে হেসে আলাপ করিয়ে দিলেন, “ জনাব এ হল আমার জান, আমার বেটি। জেবা। জেব-উন্নিসা।” জেবা মৃদু হেসে সালাম জানালো। রাজীবলোচনের মুখে বাক সরল না।
সেদিন সুলতান সুলেমানের শিবির থেকে ফিরে রাজীবলোচন বুঝতে পারল, যে সে মদন দেবের শরাহত। জেবাকে না পেলে ওনার জীবন বৃথা। বেশ কয়েকদিন অন্নজল ত্যাগ করে, বিনিদ্র রজনী যাপন করে, রাজীবলোচন আর পারল না। নতমস্তকে করজোড়ে গিয়ে দাঁড়ালো সুলতান সুলেমানের সামনে। জেবাকে বিবাহ করতে চায় রাজীবলোচন। সুলতান সুলেমান বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে বললেন, “ জেবাকে পেতে গেলে যে ইসলামকেও কবুল করতে হবে জনাব রাজীবলোচন রায়।” উৎকলী ব্রাহ্মণ রক্ত টগবগ করে ফুটে উঠল, “ কেন? আমি বিধর্মী হব কেন? আপনার কন্যা হিন্দু হবে। স্বামীর ধর্মই নারীর ধর্ম।”  সুলেমান হাসি চেপে বললেন, “যান। আপনাদের রাজামশাই কে জিজ্ঞাসা করুণ আগে। যদি ওনাদের আপত্তি না থাকে আমরা ভেবে দেখব। তবে জেবা প্রাণ থাকতে ইসলাম ত্যাগ করতে পারবে বলে মনে হয় না।”
রাজীবলোচন দৌড়ে গেল, সম্রাট গজপতি মুকুন্দদেবের কাছে। কিন্তু সম্রাট গজপতি মুকুন্দদেবের মন গলল না। উনি উপহাসের সঙ্গে বললেন, “ রাজীব , তোমার কি শেষে ভীমরতি হল? জান না? হিন্দু হওয়া যায় না। যবনী সংসর্গ করতে চাও, করতেই পার। এতদিন নারী সঙ্গ বিবর্জিত জীবন কাটিয়েছ, আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু ঐ যবনী কিছুতেই হিন্দু হতে পারে না।” রাজীবলোচনের সমস্ত অনুনয় বিনয়, চোখের জল কিছুতেই রাজামশাইয়ের মন গলল না।
ভগ্ন হৃদয়ে রাজীবলোচন ফিরে গেল সুলতান সুলেমানের কাছে। সুলেমান হেসে বললেন, “ কি বললেন তোমাদের রাজামশাই? যবনী সংসর্গে দোষ নেই, কিন্তু সেই যবনীকে বিয়ে করা ধর্মে নিষেধ। তাই তো?”
করমচার মত লাল চোখে সুলতানের দিকে তাকিয়ে রাজীবলোচন শুধু বলল, “ যবনী সংসর্গ নয়। আমি জেবাকে ভালবাসি। ওকে নিজের ঘরণী বানাতে চাই, নিছক অঙ্কশায়িনী নয়। আমি ইসলাম গ্রহণ করতে তৈরি।”
ইসলাম গ্রহণ করে রাজীবলোচনের নতুন নাম হল, জালালুদ্দিন। কিন্তু সে নামে তাঁকে কেউ চিনত না, রাজীবলোচন ওরফে জালাল ছিল বিশালাকৃতি, পেশীবহুল এবং ঘোরকৃষ্ণবর্ণ। ইতিহাস তথা তৎকালীন সমাজ তাঁকে ডাকতে লাগল “কালাপাহাড়” নামে।
(চলবে)
#Aninditasblog
https://amianindita.blogspot.com

(চলবে)
#AninditasBlog
https://amianindita.blogspot.in

No comments:

Post a Comment