Monday 7 August 2017

অনির বচন

অনির বচন #৪ পঁচিশে বৈশাখ, ১৪২৫
বলি কি, আজ তেনার জম্মদিন কি না, তাই চলুন না প্রেমঘটিত বিরোধের আজ এখানোই ইতি করি। মুষ্টিমেয় বয়ঃজ্যেষ্ঠ দিন কয়েক আগে, খোদ দমদম ইস্টিশনে যে প্রেমিক যুগলকে দমদম দাওয়াই দিয়েছিলেন, তা নিয়ে যথেষ্ট কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি  তো হল, এবার মুন্নাভাইয়ের ভাষায়, “যানে দে না মামু। ”
প্রথমতঃ সংগৃহীত  ছবিটা যদি ভালো করে দেখেন, তাহলে পক্ক কেশ জনাকয়েক বৃদ্ধের পাশে রীতিমত জ্বাজ্জল্যমান কৃষ্ণকেশ নিত্যযাত্রীকুল।
দ্বিতীয়ত বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, যে কোন কর্মব্যস্ত দিনে, দমদম ইস্টিশনে যতজন বুড়োহাবড়া থাকেন,ঠিক ততজনই অথবা ততোধিক তরুণ-তরুণী থাকেন কিনা? তাহলে ক্রুদ্ধ দাদুরা যখন নাতিনাতনীদের পিটিয়ে ছাতু করছিলেন, তখন স্টেশনে উপস্থিত অন্যান্য তরুণকূল কি করছিলেন?
তৃতীয়্তঃ আমার বদ্ধমূল ধারণা প্রেম নিয়ে উভয় পক্ষেরই কোন বিরোধ নেই। বিরোধ জনসমক্ষে ভালোবাসার প্রকাশের শালীনতা/ অশালীনতার মাত্রা তথা সংজ্ঞা নিয়ে। মাঝেসাঝে মেট্রো চড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি,আপনি  দরজা আটকে আলিঙ্গনাবদ্ধ  হলে যদি আমি নির্দিষ্ট ইস্টিশনে না নামতে পারি, তাহলে কিন্তু আমারও হেব্বি রাগ হবে মাইরি।
তাই বলে আইন স্বহস্তে তুলে নেওয়াটা কোন মতেই মেনে নেওয়া যায় না। ঠিক যেমন মেনে নেওয়া যায় না,বৃদ্ধ মানেই বিকৃতকাম, কনুই খোঁচানো আপদ। মোটেই নয়। হয়তো তাঁরা বলতেন,“রোকে জমানা চাহে, রোকে খুদাই তুঝকো আনা পড়েগা-”। আমরা বলেছি,“শরমানা ছোড় ডাল/রাজ দিলকা খোল ডাল/ আজুবাজু মত দেখ/ আই লাভ ইয়্যু বোল ডাল-” আর আপনারা বলেন,“ জিস অউর তেরি শেহনাই/উস্ অউর ম্যায় ভাগু রে”- মোদ্দা কথা এট্টাই, “ বুঝিতে॥
কে মোরে ফিরাবে অনাদরে,কে মোরে ডাকিবে কাছে,
কাহার প্রেমের বেদনায়/আমারও মূল্য আছে,
এ নিরন্তর সংশয়ে হায়ষপারি নে যুঝিতে--
আমি তোমারেই শুধু পেরেছি বুঝিতে॥”
তাই আজ বলি সব পুরাতন প্রেম(এবং বিদ্বেষ) ডাকা পড়ে যাক নব প্রেম জালে-থাকুক শুধু প্রেম। আসুন ভালোবাসি এবং অন্যদেরও ভালোবাসার সুযোগ করে দি। সুখে থাকুক সমস্ত রিজওয়ানুর এবং প্রিয়াঙ্কা,সুখে থাকুক পাড়ার খ্যাঁদা এবং বুচি। জ্বলে উঠুক ভালোবাসার আগুন, সোনার মতই সব খাদ ঝরাতে ঝলসে যাক বিষাক্ত ভাগাড়ে বাঙালী।
আর আমার জীবনের সব বুড়ো/বুড়িদের বলি, “আই লাভ য়্যু। তোমরা যেমন তেমনি থেকো। ”

অনির বচন ৩ ৫ই নভেম্বর  ২০১৭
মাঝেমাঝেই হেব্বি দুঃখ হয় জানেন। তীব্র ক্ষোভ হয়, কেন ভগবান কেন? এত সাধারণ কেন আমি?কোন বিশেষত্ব নেই,মধ্যম মেধা,মধ্যম মানের লোকজনের শেষ পংক্তিতে কোন মতে ঠেসে ঠুসে জায়গা পেতে পারি। চারপাশে সকলেই হয় চোখ ধাঁধানো সুন্দর, নয়তো কি বিস্ময়কর তাঁদের পাণ্ডিত্য, কারো গান কানে মধু ঢালে,কারো আবৃত্তির গুঞ্জন বহুক্ষণ পরেও কানেও গুনগুন  করে,কারো কবিতা মুহূর্তে নিয়ে যায় অন্য পৃথিবীতে, কারো প্রবন্ধ পড়ে নিজের অজ্ঞতায় কান্না পায়, কারো আঁকা ছবি স্তব্ধবাক হয়ে দেখি, সত্যি বলছি মা কালীর দিব্যি আমার ফেবুর টাইমলাইনে যে কয়জনের লেখা ফুটে ওঠে সকলেই  আমার থেকে কয়েক লক্ষ আলোকবর্ষ এগিয়ে, কেউ তো আবার একাধিক গুণের অধিকারী। বহুত না ইনসাফি হ্যায়।
কিন্তু মন খারাপ করে বসে থাকব, তার কি উপায় আছে, ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ ফোন করে চারটে কুৎসিত গালি সহযোগে বলবে, তোর সুখের দিনে আমায় ফোন করিস না ভাই কিচ্ছু মনে করব না। কিন্তু সমস্যার কথা যদি না শেয়ার করিস তাহলে বুঝব যে আমাকে বন্ধু বলেই ভাবিস না। পর মুহূর্তে কেউ দৌড়ে জিজ্ঞাসা করবে, মা পায়েসে কি মিশিয়েছো গো?অমৃত? এত ভালো খেতে হল কি করে? কিংবা কেউ বলবে, সর বাপ! অনেক হয়েছে। তোকে আর পেঁয়াজ কেটে কাজ নেই। যে রেটে নাক এবং চোখ দিয়ে জল বার করছিস, ভিআইপি ডুবল বলে। চশমাটা পরে আসি,তারপর আমি কাটছি। অথবা কয়েক ঘন্টার ঝটিকা সফরে যাব শুনেই কেউ জানতে চায়, চিংড়ি খাবি তো? আজ কিন্তু বলিস না ডায়েট করছি, এই রোদে তোর জন্য কত ঘুরেছি জানিস?এত্ত বড় বড় চিংড়ি এনেছি। সেই কদমতলা বাজার থেকে,আর কস্তুরি থেকে এলাচ দেওয়া ঘণ লাল ক্ষীর দই।অথবা কেউ বলে, তোর সংসারটা একবার দেখে আসব, কে জানে আর কটা দিন আছি, চোখ বোজার আগে তোর সংসারটা গুছিয়ে না দিয়ে এলে- শুনতে শুনতে দুজনেই চোখ মুছি একসাথে। হারিয়ে যেতে পারে, যাবেও, তবু আঁকড়ে ধরি নিজের অতীত আর বর্তমানকে, বুক খালি করে দীর্ঘশ্বাস বের হয়, না দিয়েছো তো প্রভু। অনেক দিয়েছো। কানায় কানায় ভরে ওঠে মন।আসলে কি জানেন তো,  আমাদের প্রত্যেকেরই ভাগে একটুকরো আকাশ থাকে। সেই আকাশের আপনিই সূর্য আবার আপনিই ধ্রুব তারা। অন্য কারো সাথে আপনার কি তুলনা? আপনার আকাশ জুড়ে শুধুই আপনি। আপনি অতুলনীয়, তুলনারহিত-
অনির বচন #২ ১লা সেপ্টেম্বর  ২০১৭
ঠিক যেদিন আপনি তিথি নক্ষত্র বিচার করে, আবহাওয়া দপ্তরের যাবতীয় ভবিষ্যৎ বাণী পুঙ্খানু্খ ভাবে পর্যালোচনা করে অবশেষে মনের আনন্দে আপনার সবথেকে প্রিয় ধপধপে পোশাকটি পড়ে অফিস যাবেন, ঠিক সেদিন, সেই দিনই বাড়ি ফেরার পথে মাঝপথে আকাশ ভাঙবে। আকাশকে যেন হিসাব কষে ভাঙতেই হবে সেদিন,ফলতঃ প্রবল হতাশা দমন করে পোশাকের মায়া ত্যাগ করে অন্তত মাথাটুকু (এবং অবশ্যই মোবাইল ফোন)  বাঁচাবার জন্য প্যাচপ্যাচে কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে আপনি কাঁধের বিশাল ঝোলার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে আঁতিপাঁতি  করে ছাতা খুঁজতে যাবেন, এবং আবিষ্কার করবেন  সব কিছু এমনকি হাতড়ালে বাঘ ভাল্লুক ও বেরোতে পারে আপনার ঝোলা থেকে--- শুধু ছাতাটিই যেন যাদুমন্ত্র বলে কোথায় গায়েব হয়ে গেছে।  অগত্যা বৃষ্টি মাথায়, কাদা মেখে এবার বাড়ি ফেরার পালা- আর বাড়ি পৌছলে আপনার কপালে কি জুটতে চলেছে (মানুন বা না মানুন এমনকি বিবাহবিচ্ছেদ ও হতে পারে ) তা শুধু আপনিই জানেন।
বলাইবাহুল্য এটি মহিলাদের ক্ষেত্রে একটু বেশি প্রযোজ্য।
অনির বচন # ১ ০৭/০৮/০৯
ঠিক যখন আপনি সবথেকে গুরুগম্ভীর মিটিংটিতে বসে বোর হবেন, অথবা উর্ধ্বস্থ কতৃপক্ষ আপনাকে হাত পা নেড়ে বেপোট ঝাড় দিতে উদ্যত হবে, দেখবেন ঠিক তখনই আপনার বন্ধুদের জীবনে সবথেকে মজাদার ঘটনাগুলি ঘটতে থাকবে এবং তারাও অযথা সময় অপচয় না করে তৎক্ষণাৎ তা আপনাকে জানাতে থাকবে। উদ্গত হাই চেপে যদি একটিবার হোয়াটস্অ্যাপ খুলেছেন, তো ঐ যে বলে না “তু শালা কাম সে গ্যায়া। ” না পারবেন হাসতে, না পারবেন হাসি চাপতে। হাসি চাপতে গিয়ে হয় ভয়ানক হেঁচকি  তুলতে বাধ্য হবেন নয়তো প্রবল বেগে নিজেকে চিমটি কেটে রক্তাক্ত করতে উদ্যত হবেন তাও হাসি দমবে না। ফলে মুখটিকে অবিকল প্যাঁচার মত করে বসে থাকবেন এবং ওপরওয়ালা আপনার ঐ চাঁদবদন দেখে বুঝতেই পারবেন,  না তো আপনি ওণার কথা শুনছেন, নাই নিকট ভবিষ্যতে শুনতে ইচ্ছুক। ফলে ঝাড়ের বেগ প্রবল থেকে প্রবলতর হবে।
♥♥পুনশ্চ ইহা মহিলাদের ক্ষেত্রে একটু বেশী মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়।

No comments:

Post a Comment