Saturday 9 September 2017

ফেমিনিস্টের ডাইরি

অনির ডাইরি ২৮শে সেপ্টেম্বর  ২০১৭
(ফেমিনিস্টের ডাইরি ৫)
শেরিলের গল্প জানেন? পুরো নাম শেরিল অ্যারারুহো। শরীরে পর্তুগিজ রক্ত থাকলেও আদতে ম্যাসাচুসেটস্ এর বাসিন্দা, শেরিল মোটেই ভাল মেয়ে ছিল না। না হলে মাত্র ২১বছর বয়সে কেউ দুটি কন্যা সন্তানের জননী হতে পারে? দিনটি ছিল ৬ই মার্চ,১৯৮৩, শেরিলের বড় মেয়ের তিন বছরের জন্মদিন। ছোট খাটো পার্টিও দিয়েছিল শেরিল, তারপর দুই কন্যাকে ঘুম পাড়িয়ে শিরিল বের হল সিগারেট কিনতে। বলে ছিলাম ভালো মেয়ে না, না হলে অত রাতে কেউ সিগারেট কিনতে বের হয়?যাই হোক,শিরিলের চেনা দোকান ততোক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে। অগত্যা বিগ ড্যান বলে একটা বারে পৌঁছল শিরিল সিগারেট কেনার তাড়নায়। এত রাত্রে কোন ভদ্র বাড়ির মেয়ে বারে যায়? তাও সিগারেট কেনার বাহানা করে? ফলতঃ এই সব নষ্ট মেয়েদের সাথে যা হয়, শিরিলের সাথেও তাই হল। প্রথমে দুজন পুরুষ এসে বলল,“আমাদের সাথে চলো। ” কি আমার সতী লক্ষী রে, বলল যাব না? এত বড় সাহস? জোর করে শিরিলকে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলা হল, বারের পুল টেবলে,এবং পর্যায়ক্রমে একাধিক ব্যক্তি শিক্ষা দিল শিরিলকে। চরম শিক্ষা। শিরিলের শিক্ষা হচ্ছিল ভরা বারে, শিরিল চিৎকার করছিল, কাঁদছিল, কেউ কিন্তু সাহায্য তো করেইনি উল্টে চিয়ার করছিল শিক্ষাদাতাদের হয়ে।
দাঁড়ান, কি শিরিলের সমুচিত শিক্ষা হল?আজ্ঞে না। এত সহজে কি এমন মষ্ট মেয়েদের ছেড়ে দিতে আছে নাকি?আদালতে কেস উঠল, বিরোধী পক্ষের উকিল বাবুরা ছিঁড়ে ফেলল শিরিলকে, যেনতেন প্রকারে প্রমাণ করেই ছাড়ল শিরিল একটা নষ্ট মেয়ে,  পেমেন্ট নিয়ে মতান্তরের ফলেই শিরিল তার বাবুদের প্যাঁচে ফেলতে এই গ্যাংরেপ ভিকটিম হবার নাটক করছে। কোর্টের ভিতরের খবর ছড়িয়ে পড়ল গোটা দেশে, এমনকি শিরিলের নামটাও জেনে গেল সবাই। বেচারা শিরিলকে ছাড়তে হল তার শহর, মাত্র ২৫বছর বয়সে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে মারা গেল শিরিল। আর শিরিলের শিক্ষাদাতারা?তাদের জেল হল বটে, যার সর্বোচ্চ সীমা ছিল সাড়ে ছ বছর মাত্র। আদালতও সেভাবে একটা নষ্ট ল্যাটিনার পাশে দাঁড়ায়নি।
শিরিল তথা বিগ ড্যান রেপ নিয়ে ১৯৮৮সালে একটা সিনেমা হয়, যার জন্য জোডি ফস্টার সে বছর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে অস্কার পেয়েছিলেন, নামটা বুঝে গেছেন আশা করি, “দা অ্যাকিউসড্”।
কেন এই গল্পটা আবার বললাম বলুন তো? আজ আর একজন শিরিলকে দেখলাম জানেন তো, আমাদের এই পবিত্র ভূমে।অন্ধ্র্র প্রদেশের প্রকাশম জেলার বাসিন্দা, এই শিরিলেরও বয়স বেশী নয়, ১৯ মাত্র। বছর খানেক ধরে এক নব্য যুবকের সাথে গড়ে উঠেছিল হৃদয়ের সম্পর্ক। যা হয়, অ্যাপো ছিল মেয়েটির সাথে ছেলেটির, এক নির্জন মন্দিরে।সেই মত, ছেলেটি পৌঁছে যায় তার দুই সুহৃদকে নিয়ে,মেয়েটিও উপস্থিত হয় তার এক সহেলীর সাথে। এবার?মধুর মিলন তাই তো?  আজ্ঞে না,হল ঠিক তাই যা শিরিলের সাথে হয়েছিল, কে করল বলুন তো?মেয়েটির সেই বিশেষ বন্ধু, যার সাথে সে প্রেমজালে আবদ্ধ হয়েছিল। তাও বাকি দুই স্যাঙাতের সামনে। তারাও চাৎকার করে চিয়ার টিয়ার করল।  শুধু তাই নয়,পুরো ঘটনাটির ভিডিও তোলা হল, “In the video, the teenager begs, screams and tries to get away as her attacker tries to disrobe and rape her. In desperation, she tries to hold on to another girl who is seen making feeble attempts to stop him.” সেই ভিডিও আবার সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দেওয়া হল। এই না হলে প্রেম?
এবার আপনি বলুন তো?দোষ কার?অবশ্যই মেয়েটির তাই না?কোন ভদ্র বাড়ির মেয়ে এভাবে পরপুরুষের সাথে দেখা করতে যায়? তাও আবার এক পরিত্যক্ত নির্জন মন্দিরে?ছিঃ।এভাবে আর কতদিন চলবে বলুন তো? কতদিন, ঠিক কতদিন আর আমরা আমাদের মেয়েদের শেখাবো, যে পুরুষ হল এক ভয়ানক প্রজাতি। ওদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাই মঙ্গল। আর ঠিক কতদিন মুখ বন্ধ করে,চোখ বন্ধ করে বসে থাকব? ঠিক যেমন ঐ মেয়েটি বসেছিল। ঘটনাটি অগস্ট মাসে ঘটলেও সোশাল নেটওয়ার্কে ভিডিওটি দেখে মেয়েটির বাবা সদ্য পুলিশে অভিযোগ করেন, তিন পুঙ্গবই আপাততঃ পুলিশ হেফাজতে। বলতে ভুলে গেছি, তিন পুঙ্গবের কেউই কিন্তু অশিক্ষিত নয়, একজন সদ্যস্নাতক,বাকিরা এখনও কলেজে।
অনির ডাইরি ২৭শে সেপ্টেম্বর  ২০১৭
(ফেমিনিস্টের ডাইরি #4)
আমাদের একটা গ্রুপ আছে,ছোট মহিলা অফিসারদের গ্রুপ। কোন একটা ফেমিনিস্ট পেজে তর্কাতর্কি করতে গিয়ে আলাপ,সেখান থেকেই গভীর বন্ধুত্ব। বলাইবাহুল্য প্রত্যেকেই ফেমিনিস্ট বলে পরিচয় দিতে অত্যন্ত শ্লাঘা বোধ করি। সেই গ্রুপের এক সদস্যা,ধরে নেওয়া যাক তার নাম তৃণা, সাথে তার বসের অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। অন্য গন্ধ খুঁজবেন না,স্নেহ মিশ্রিত বন্ধুত্বের সম্পর্ক। মেয়েটি অত্যন্ত সিরিয়াস আর বস্ ছিলেন ততোধিক ফাঁকিবাজ,ফলে নির্ভরশীলতা তৈরি হতে সময় লাগেনি। এহেন বস্ যখন বদলী হয়ে গেলেন,নতুন বস্ ,ধরে নেওয়া যাক তাঁর নাম “দ” বাবু, এসেই তার পুরুষ সহকর্মীদের জনান্তিকে বললেন,“তৃণার এবার কি হবে?ওর “বাবু” তো চলে গেল। ” “বাবু” শব্দটি খেয়াল করলেন? একজন স্বাধীন শিক্ষিতা স্বোপার্জিত অর্থে জীবন অতিবাহিত করা অবিবাহিত মেয়ের কারো সাাথে সুসম্পর্ক থাকার অর্থই হল “বাবু এবং রক্ষিতা” মার্কা কেস্ আর কি।
যাই হোক মজার কথা হল, দ বাবু যে পুরুষ সহকর্মীর সাথে এক গ্লাস বিয়র (নাকি চা) সহযোগে এই রসালো চর্চাটি করলেন,সেই পরদিন তৃণার কানে কথাটি তুলে দিল। ছেলেটি বেশ কিছুদিন যাবৎ তৃণাকে প্রেম নিবেদন করে আসছিল, তৃণার অসাক্ষাতে সে তৃণার নামে কদর্য কুৎসা শুনতে পারে বটে তবে তৃণার কানে তা না তুলে থাকতে পারে না।
তৃণা ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দিলেও আমরা বাকিরা গ্রুপে প্রচুর চিৎকার করতে লাগলাম। এ কি অসভ্য লোক।
গল্প এখানেই থামল না,দ বাবু এবার তৃণার এক ঘনিষ্ট মহিলা সহকর্মী, বিতস্তা,যে কি না আমাদের গ্রুপেরই সদস্যা তার কাছে তৃণার নামে কুৎসা রটাতে বসলেন। দিন কয়েক আগে কলকাতাতে একটা বড় মিটিং হয়,সেখানে তৃণার প্রাক্তণ বস্ ও আসে। যথারীতি তৃণার সাথে হাই হ্যালোও হয়, তারপর মিটিং শেষে তৃণা আর বিতস্তা একসাথে বেরিয়ে মেট্রো ধরে যে যার বাড়ি ফিরে যায়। দ বাবুর বক্তব্য তৃণা নিজের বাড়ি যায়নি,বরং আগের বসের বাড়ি গেছে এবং দুজনে কি করেছে সে আর বলতে চাইনা। বিতস্তার মেরুদণ্ডের জোর ছিল,বিতস্তা বন্ধুর হয়ে প্রতিবাদ করে এবং বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে তৃণা এবং বিতস্তা এক সাথেই মেট্রো ধরেছিল। দ বাবুর লজিক শুনুন,“তুই ওকে মেট্রো অবধি পৌছে দিয়েছিলি, বাড়ি তো আর ছেড়ে আসিসনি। তুই নেমে যাবার পরই ওরা একসাথে উল্টো দিকের মেট্রো ধরে। আমি জানি। লোকজন দেখেছে। ”সেই লোকজন কে তা আর শতচেষ্টাতেও জানা যায়নি।
একজন মহিলা কলিগের নামে এত কদর্য গসিপ, পরিষ্কার সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের সংজ্ঞায় পড়ে। প্রতি সরকারী দপ্তরে(আদতে সর্বত্রই থাকার কথা যদিও) একটি আইসিসি (Internal Complaints Committee)থাকে, এই ধরণের অভিযোগের নিষ্পত্তি করার জন্য,তৃণাকে আমি বারবার বললাম অভিযোগ জানাতে। তৃণা খুব ক্যাজুয়ালি ইগনোর করে গেল, ওর লজিক ছিল, দ বাবু আসলে তাঁর পূর্বোক্ত পদাধিকারীকে সহ্য করতে পারেন না, তাই তাঁকে বদনাম করার জন্যই তৃণাকে ব্যবহার করছেন। তৃণা যদি এই নিয়ে শোরগোল  করে,তবে ব্যাপারটা আগের বসেরও কানে যাবে। উনি কি ভাববেন?ওণার পারিবারিক  জীবনে নানা সমস্যা তৈরি হবে। তার থেকে তৃণা চেষ্টা চরিত্র করে বদলী নিয়ে চলে গেল সুদূর উত্তর বঙ্গ।
নিজেকে সাময়িক ভাবে মনে হয়েছিল চূড়ান্ত ফেলিওর। তৃণার জীবন,তৃণার সিদ্ধান্ত। সত্যি এই ধরণের নোংরামির সাথে লড়তে গেলে নিজেকেও পাঁকে নামতে হয়। সেটা কজন পারে? আর পারে না বলেই দ বাবুর মত লোকেরা সুযোগ নেয়।  আমি নিজে হলেও পারতাম কি না জানি না,তবে গলা ফাটিয়ে ঝগড়া তো করতামই। 
আপনাদের কাছেও বিনীত অনুরোধ প্রতিরোধ করুন,না পারলে প্রতিবাদ তো করুন। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করুন, আর পাঁচ জন মহিলার সাথে অবশ্যই শেয়ার করে নিন আপনার অভিজ্ঞতা। আর কোন অবস্থাতেই নিজেকে দোষ দেবেন না। দুর্গা পুজো বিকৃতকাম লোকেদের সুবর্ণ সুযোগ,ভিড় আর চাপাচাপির সুযোগ নিতে দেবেন না। একটা কথা মনে রাখবেন, যারা আপনার পিছনে আপনাকে নিয়ে যৌনোত্তেজক কুৎসা করে, বা আপনার অন্যমনস্কতার সুযোগে আপনাকে স্পর্শ করে, তার আর যাই থাক সাহস বলে বস্তুটি নেই। যে মুহূর্তে আপনি ঘুরে দাঁড়াবেন, লেজয়গুটিয়ে পালাবেই পালাবে। আর একটি অনুরোধ কোন মহিলা যদি এ হেন কোন ঘটনার প্রতিবাদ করেন,পারলে তার পাশে দাঁড়ান, দোহাই তার স্বভাব চরিত্র বা পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে বিশ্লেষণ করতে বসবেন না। একজন দেহপসারিনীর দেহ ও তার বিনানুমতিতে স্পর্শ করা কিন্তু গর্হিত অপরাধ। ভুললে চলবে না। শুভ সপ্তমী। পুজো ভালো কাটুক সকলের।

অনির ডাইরি ১৭ই সেপ্টেম্বর  ২০১৭
(ফেমিনিস্টের ডাইরি #3)
বিক্ষোভরত একদঙ্গল কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা, প্রত্যেকেরই বয়স ১৮-৩৫এর মধ্যে, পরনে একই ধরনের পোলকা ডটেড অ্যাপ্রন, যার নিম্নাংশ গাঢ় রক্ত রঞ্জিত। এক ঝলক দেখেই চমকে উঠেছিলাম। এরা কারা? নতুন কোন নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করছে কি?  নাকি ঋতুচক্রচলাকালীন ছুটির দাবী জানাতে রক্তাপ্লুত অবস্থায়ই বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। অদ্ভুত তো!
ঘড়ির কাঁটা প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই, বর গলা খাঁকরে বুঝিয়ে দিল,  এবার ফোন বন্ধ করার সময় হয়ে গেছে, নাহলে শৌভিকের ভাষায় কাল সকাল সাড়ে পাঁচটায় আমাকে ঘুম থেকে তুলতে দমকল ডাকতে হবে। ফোন বন্ধ করার আগে এক ঝলকে যা বুঝলাম, কোন একটি স্ট্যাচু সরিয়ে নেবার দাবীতে এই বিক্ষোভ। কার স্ট্যাচু? ডঃ জেমস্ ম্যারিওন সিমস্ নামী কেউ, যাঁকে বলা হয় আধুনিক স্ত্রীশরীরবিদ্যার জনক।
সে রাতের মত ফোন বন্ধ করে দিলেও ঐ রক্তস্নাত কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েগুলিকে ভুলতে পারলাম কই? বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে যা জানতে পারলাম, ডঃ সিমস্ এক যুগন্ধর পুরুষ। উনবিংশ শতকের প্রথম ভাগে ওনার জন্ম। স্বেচ্ছায় ডাক্তারী পড়তে আসেননি, বরং নিজের আত্মজীবনীতে  লিখে গেছেন,“উকিল হতাম না, মন্ত্রী হতে পারতাম না। অগত্যা ডাক্তারিই সই।” জীবনের প্রথম অর্ধে খুব বেশি সফলতার মুখ দেখতে পাননি। 

“ভেসিকোভ্যাজাইনাল ফিসচুলা” এর চিকিৎসা করে পরে  প্রচুর সুনাম এবং অর্থোপার্জন করেন। তৎকালে অধিকাংশ মহিলারই নর্মাল ডেলিভারি হত। সন্তান প্রসবের সময় ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত অনেক টিস্যু, নালীকা, এমনকি ইউরিনারি ব্লাডারও অনেক সময় ফুটো হয়ে যেত। ফলে অবর্ণনীয় যাতনা ভোগ করতেন বিত্ত নির্বিশেষে সকল মহিলাই। এর কোন চিকিৎসা ছিল না। ডঃ সিমস্ প্রথম সফল ভাবে এর চিকিৎসা করেন।  নাকি প্রথম গল ব্লাডার অপারেশন ও করেন। এমনকি প্রথম আর্টিফিশিয়াল ইনসেমেনাশেন এর কৃতিত্ব ও ওনার ঝুলিতে। তৎকালীন বহু ইউরোপীয়  রাজপরিবারের মহিলাদের চিকিৎসার দায়ভাগ ছিল ওনার স্কন্ধে।
তবে? এই প্রতিবাদ কেন?সেখানেই তো গল্প। এই সমস্ত রোগের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি তো আর স্বপ্নদর্শী ছিল না।  আবিষ্কার করার জন্য অবশ্যই ট্রায়াল এন্ড এরর পদ্ধতির সাহায্য নেন ডঃ সিমস্। যার জন্য ওণাকে বহু বার অস্ত্রোপচার করতে হয়, এই অস্ত্রোপচার উনি কাদের ওপর করেন বলুন তো? না কোন গিনিপিগ টিনিপিগ নয়, ওসবের কি দরকার যদি আপনার হাতের কাছেই কিছু কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসী থেকে থাকে।
আজ্ঞে হ্যাঁ। উনি ১১জন ক্রীতদাসীর ওপর যাবতীয় পরীক্ষা নিরিক্ষা করেন। যাদের বয়স ছিল কারো ১৪ কারো বা ১৮। কথিত আছে একজন ক্রীতদাসীর ওপর উনি ৩০ বার ছুরি চালান। বুঝতেই পারছেন, ক্রীতদাসীদের কনসেন্ট অর্থাৎ অনুমতি নেবার কোন প্রয়োজনই উনি বোধ করেননি। আর হ্যাঁ প্রতিটি অস্ত্রোপচারই হয় বিনা অ্যানেস্থেশিয়ায়, অর্থাৎ বিন্দুমাত্র  অবশ না করে, সম্পূর্ণ সজ্ঞানে। কারণ ডঃ সিমস্ বিশ্বাস করতেন, কালো মেয়েদের ব্যথাবেদনার বোধ থাকে না।
“J. Marion Sims was a gynecologist in the 1800s who purchased Black women slaves and used them as guinea pigs for his untested surgical experiments. He repeatedly performed genital surgery on Black women WITHOUT ANESTHESIA because according to him, ‘Black women don't feel pain.’ Despite his inhumane tests on Black women, Sims was named ‘the father of modern gynecology’, and his statue currently stands right outside of the New York Academy of Medicine.”

অনির ডাইরি ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭
(ফেমিনিস্টের ডাইরি #২)
২০০৯ এর মধ্য ভাগ। আমি তখন সহশ্রম কমিশনার খড়গপুর। চেম্বারে বসে আছি, হঠাৎ পর্দা সরিয়ে কে যেন উঁকি দিল। তাকিয়ে দেখি, একটি বছর ২৫-২৬এর মেয়ে ভিতু ভিতু চোখে তাকিয়ে আছে। একেবারে বিশেষত্বহীন চেহারা, মাঝারি উচ্চতা, বেশ কালো গায়ের রঙ, পরনে সস্তা সিনথেটিক শাড়ি, কপালে বড় লাল টিপ, দুহাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। চোখে চোখ পড়তে খুব আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল, “আসব?” ঘাড় নেড়ে অনুমতি দিলাম। সন্ত্রস্ত হয়ে মেয়েটি যখন ঢুকল, দেখলাম একটা বছর পাঁচ-ছয়ের বাচ্ছাও সাথে আছে।
ইশারায় বসতে বলে জানতে চাইলাম কি ব্যাপার।
মেয়েটি ভিতু ভিতু ভাবে যা বলল, তাতে বুঝলাম যে স্থানীয় একটি নামী কারখানায় কাজ করত মেয়েটি, দিন তিনেক আগে জানিয়ে দিয়েছে, কাল থেকে আর আসার দরকার নেই। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট অ্যাক্টে আমরাই কন্সিলিয়েশন অফিসার, অর্থাৎ কি না, মিটমাট করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের। প্রথম দিন থেকেই এই একটি কাজ আমার ঘোরতর অপছন্দ। আমার সদ্য পরিণত বর, ঠিকই বলত, আমি ঝগড়া করতে পারি, মেটানো আমার পিতৃদেবের ও অসাধ্য।এই কাজে আমার তীব্র অনীহা এবং অপারদর্শিতা দেখে তৎকালীন বড় সাহেব নিজেই অধিকাংশ বিবাদ সামলাতেন।

প্রাথমিক ভাবে মেয়েটিকে বুঝিয়ে দিলাম, কি করণীয়। যাবার সময় করজোড়ে বলে গেল,”একটু দেখবেন দিদি। বর থেকেও নেই, একা হাতে সংসার টানি, মেয়েকে স্কুলে পড়াই, চাকরী চলে গেলে খাব কি? মরে যাব দিদি আমরা মা-মেয়ে।“ শেষের দিকে চোখের কোণ চিকচিকিয়ে উঠেছিল, অবোধ শিশু হাঁ করে তাকিয়ে ছিল মায়ের দিকে। মেয়েটির কাঁপা হাতে লেখা অভিযোগনামার ফটোকপি পাঠিয়ে কোম্পানিকে বললাম, সাত দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিন। সাত দিন ছাড়ুন, পরের দিনই ম্যানেজার সাহেব এসে হাজির,” মেয়েটি এক্কেবারে বাজে মেয়ে ম্যাডাম। এত বড় সাহস, আমাদের সুপারভাইজারকে ‘কুত্তা’ বলে? ওকে ফেরত নেবার প্রশ্নই নেই, ম্যাডাম। এই রকম অনুরোধ করে আমাদের বিপাকে ফেলবেন না। আপনার কথা তো আর ফেলতে পারব না। হে হে”।
একটু রুঢ় ভাবেই বললাম, আইন তার পথে চলবে, মেয়েটি যখন আমাদের দ্বারস্থ হয়েছে, আমাকে আমার কর্তব্য করতেই হবে। পরের ধাপ যৌথ মিটিং। এবার ম্যানেজার একা এলেন না, সঙ্গে সুপারভাইজারকেও নিয়ে এলেন। সে কি হম্বিতম্বি সেই সুপারভাইজারের,মেয়েটি ক্রমে ভয়ে কেঁচো হয়ে মনে হচ্ছিল মাটিতে মিশে যাবে। এবারেও বাচ্ছাটি সঙ্গে ছিল, কেন জানি না মনে হল, বাচ্ছাটি থাকাতে মেয়েটি স্বচ্ছন্দ বোধ করছে না। বাচ্ছাটিকে আমার পিওনের হেফাজতে কিছুক্ষণের জন্য পাঠাতেই দেখলাম, মেয়েটির আস্তে আস্তে গলার জোর বাড়ল। মেয়েটি বারবার একই কথা বলে যাচ্ছিল, “আমাকে রোজ বিরক্ত করত। আমি কতদিন সইব?”
মালিক পক্ষকে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসতে বলে, মেয়েটিকে একাকী পেয়ে প্রশ্ন করলাম,” কি ভাবে বিরক্ত করত তোমায়?” আচমকা আমাকে চমকে দিয়ে মেয়েটি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল, “নোংরা লোক। বেশ করেছি কুত্তা বলেছি। আবার বলব। বার বার বলব।“ প্রায় সাত-আট মিনিট এভাবেই কাটল, মাথার ওপর ঘড়ঘড়ে পাখা আর নীচে মেয়েটির ফোঁপানি ছাড়া আর  আওয়াজ নেই। চোখে আঁচল চেপে কেঁদেই যাচ্ছে মেয়েটি। শেষে বলল, সুপারভাইজারটি নাকি প্রায়ই ওকে বর তুলে নানা অপমান জনক কথা বলত। যেমন  কাজে ভুল করলেই বলত, “এই জন্যই তোর বর তোকে ছেড়ে চলে গেছে।“ কাজে ভুলচুক না করলে বলত, “ মেয়েদের একটু সেজে গুজে থাকতে হয়। একটু নখরা করতে জানতে হয়, তা না হলে বর টেকে না।“ এ গুলো তাও হজম করে নিত মেয়েটি কিন্তু শেষ দিনে এমন কিছু বলেছে, আর সহ্য করতে পারেনি মেয়েটি। কি বলেছে, জিজ্ঞেস করাতে মেয়েটি এমন হিস্টেরিক হয়ে উঠল, যে বললাম, থাক বাবা।
মালিক পক্ষকে ডেকে নিলাম, সুপারভাইজার তখনও ফুঁসছে, “বাজে নোংরা মেয়ে। ওপরঅলাকে কি ভাবে সম্মান জানাতে হয় জানে না-“ । এবার রীতিমত চিৎকার করে উঠতে বাধ্য হলাম, “আপনি একজন মহিলা অফিসারের ঘরে বসে, অপর একজন মহিলার সম্বন্ধে কি ধরণের ভাষা প্রয়োগ করছেন? ও আপনাকে কি বলেছে, তাতো আমরা জানি, এবার বলুন তো আপনি ঠিক কি বলেছিলেন?” জোঁকের মুখে নুন পড়তে দেখলাম। প্রথমে বারবার বলতে লাগল, “কিছু বলিনি।কিছু বলিনি।“ আরো এক প্রস্থ ধমক এবং চিৎকারের পর, বলল, “সামান্য রসিকতা করেছিলাম ম্যাডাম।“ রসিকতা? কি এমন রসিকতা যা একটি মেয়েকে ফুলে ফুলে কাঁদতে বাধ্য করে? বললাম,” কি বলেছিলেন? বলুন শুনি। আমাদের সামনে একবার বলেই ফেলুন।“

দৃশ্যত অস্বস্তিতে ভুগছেন ওনারা বেশ বুঝতে পারছিলাম। আমার পেড়াপিড়িতে শেষে ম্যানেজার হাতটাত কচলে বললেন, “তেমন কিছু নয় ম্যাডাম।আপনার সামনে বলাটা শালীন হবে না।“ কেন? জাঁকিয়ে বসলাম, নিজের সিটে, পথে এস বাছাধন। মেয়েটিও এবার কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে উঠল, “হিম্মত থাকলে বলে দেখা।“ সুপারভাইজার লোকটি তখনও অনড়।“আপনাকে ওসব বলা যায় না। কুলি-কামিনদের ভাষা।“  বাঃবাঃ,কি অসাধারণ লজিক। কুলি-কামিন মেয়ে হলে তাকে সব বলা যায়, এএলসি মেয়ে হলে তার সামনে সতীপনা করতে হয়। কিছুতেই সুপারভাইজার লোকটি বলল না, মেয়েটিই শেষে বলল, “ আমি বলছি ম্যাডাম, ও আমাকে বলেছে, তোর বর যে তোকে ছেড়ে গেছে, তোর শরীরের খিদে লাগে না? লাগলে কি করিস?”
১৯৯২ সালে রাজস্থানের সরকারের নারী উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরতা এক নারী, তার সরকার নির্ধারিত কর্তব্য করতে গিয়ে গণ ধর্ষিতা হন। মহিলার নাম ভাঁওরি দেবী আর কাজটি ছিল বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জনচেতনা জাগরণ করা। সেদিন থেকে আজ অবধি ভাঁওরি দেবী বারংবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, সুবিচারের আশায়। সুবিচার পাননি বটে, তবে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ১৯৯৭ সালে সুপ্রীম কোর্ট কিছু নির্দেশনামা জারি করে, যার পোশাকী নাম বিশাখা গাইডলাইনস্। এর আরো পনেরো বছর পর আবার একটি মেয়ে গণধর্ষিত হয় দিল্লীর রাস্তায়। যার নাম জ্যোতি সিং। জ্যোতির সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে দেশ ব্যাপী আন্দোলন বাধ্য করে সরকারকে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করতে।  ২০১৩ সালে পাশ হয় সেই আইন।
২০০৯এ, সে ছিল নিছক কষ্ট কল্পনা মাত্র। প্রথম চোটেই আমার মনে হয়েছিল মেয়েটির খিস্তিখেউড়ের ওপর একটি ক্লাশ নেওয়া আবশ্যক। কুত্তা আদপেই  গালি যথোপযুক্ত নয়। হাওড়াকে কোন এককালে কুলি টাউন বলা হত, হাওড়ার মেয়ে হিসেবে আমার গালির ভাঁড়ার উপচে পড়ে, দেবার মত লোক পাই না। সুপারভাইজার এবং ম্যানেজারের ওপর প্রয়োগ করতে পারলে কি ভালোই না হয়। সাথে দু চার ঘা মেয়েটির হাওয়াই চটির বাড়ি, আহাঃ সোনায় সোহাগা হত গো।
কিন্তু সব ইচ্ছা তো আর পূর্ণ হয় না।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট অ্যক্টের মধ্যে থেকেই শালীন পরিশীলিত ভাষায় ঝাড়লাম। বরখাস্ত করার আগে মেয়েটিকে সতর্ক করা উচিত ছিল। ওকে সময় দেওয়া উচিত ছিল নিজেকে সংশোধন করার( যেন মেয়েটির সংশোধিত হওয়া আবশ্যক ছিল)।  শো কজ করা উচিত ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। যার কিছুই করেননি। বিনা বাক্য ব্যয়ে পত্রপাঠ বিদায় দেওয়া সাংঘাতিক বেআইনী  কাজ হয়েছে । শেষ পর্যন্ত ওরা মেয়েটিকে ফিরিয়ে নিতে নিমরাজি ও হল। কিন্তু অবলা স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েটি থুঃ করে আওয়াজ করে বলল,“আজ মিষ্টি কথা বলে চাকরীতে ঢোকাবে, কাল আপনি যা যা বললেন ম্যাডাম সব সব করে, অল্প কিছু টাকা গছিয়ে আমায় তাড়িয়ে দেবে। কে চায় ওদের চাকরী। লোকের বাড়ি বাসন মেজে খাব, তবু ওদের চাকরগিরি করব না। ওরা মরে না কেন?” উফ্ কাকে অবলা ভাবছিলাম? প্রকৃতপক্ষে সত্যিই কি কেউ অবলা হয়? যদি হতেও চায়, জীবন ছাড়ে না। শিখিয়েই ছাড়ে, লড়াই করতে। আপনার লড়াই আপনাকেই লড়তে হবে। পারলেন তো সারভাইভাল অব দা ফিটেস্ট, নতুবা মহাকালের খাতায় রোজ কত নামই যে লেখা হয়।

অনির ডাইরি ৯ই সেপ্টেম্বর  ২০১৭
(ফেমিনিস্টের ডাইরি #1)

আসুন টেরির সাথে আলাপ করিয়েদি। ২০১২র ডিসেম্বরে যেদিন জ্যোতি সিং বলে একটি মেয়ে তার প্রিয়তমের হাত ধরে ইভনিং শোয়ে লাইফ অব পাই দেখতে গিয়েছিল, তার ঠিক দিনদুয়েক আগেই আমিও গিয়েছিলাম, আইনক্স ফোরামে, আমার বরের সাথে ঐ একই সিনেমা দেখতে। আমরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারলেও জ্যোতি এবং তার বন্ধুর সাথে যা হয়েছিল, তাতে কেঁপে উঠেছিল পুরো দেশ। চিনতে পেরেছেন আশা করি, জ্যোতি সিংকেই আমরা আদর করে নির্ভয়া বলে ডাকি।
নির্ভয়া কাণ্ড আমার মানুষের ওপর বিশ্বাসের ভিতটাই নড়িয়ে দিয়েছিল। এইসময় বিভিন্ন রেপ সারভাইভারের গল্প পড়া প্রায় নেশার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। বেনামে বিভিন্ন রেপ সারভাইভার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করত লোকজন। প্রসঙ্গত তাদের মধ্যে বেশ কিছু পুরুষও ছিল। পাঠক এবং অ্যাডমিনরা নিজের নিজের মত কাউন্সেলিং করত। এইরকমই একটা ওয়েবসাইটে কিছুদিন আগে টেরির কথা জানতে পারি।
টেরি আদতে নাইরোবি,কেনিয়ার বাসিন্দা। দিনটি ছিল টেরির বিয়ের দিন। বহু বছরের পুরাণো প্রেমিক হ্যারির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে টেরি। সাধ্যাতীত আয়োজন করেছে টেরির বাবামা। নামি চার্চ বুক করা হয়েছে, দামি গাউন ভাড়া করা হয়েছে। বিয়ের দিন ভোরে টেরি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল, তার এক বন্ধুকে বাসে তুলে দিতে, ফেরার পথে নির্জন রাস্তায় তিনজন দুর্বৃত্ত টেরিকে বলপূর্বক অপহরণ করে। টেরি কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বারবার বলছিল,“আজ আমার বিয়ের দিন”।
বিয়ের কনেকে বলাৎকার করার মধ্যে বোধহয় বেশ একটা পৈশাচিক আনন্দ আছে। নেটে সার্চ করে দেখুন, ব্রাইড বা ভার্জিন ব্রাইড রেপড্ অন ওয়েডিং নাইট বলে গাদা গাদা ট্রিপল্ এক্স ভিডিও পাবেন। কিন্তু সেগুলি নিছক রোল প্লে মাত্র। টেরির মত রক্ত মাংসের মানুষ নয়।
বিয়ের সময় পার হয়ে গেল, হ্যারি তার পরিবার অপেক্ষা করতেই থাকল, টেরির আর দেখা নেই। শুরু হয়ে গেল ফিসফিসানি। পরের বিয়ের সময় হয়ে গেল, সব সাজগোজ খুলে ফেলে পরের বিয়ের জন্য সাজতে লাগল চার্চ। হ্যারি তবু আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করতে লাগল। প্রায় বিকালে ফোনটা এল। নাইরোবির বড় সরকারি হাসপাতালের হেড মেট্রনের কেমন যেন সন্দেহ হয়েছিল,নাইরোবির বাইরের রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তাপ্লুত, অর্ধনগ্ন মেয়েটি বোধহয় কোন বিয়ের কনে। চার্চে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়, কোন মিসিং ব্রাইড আছে কিনা।
হ্যারি, টেরির বাবামা, আত্মীয়স্বজন দৌড়ে যায়। গণধর্ষিতা টেরি, অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছিল, নিজের সম্ভ্রমটুকু বাঁচানোর,ফলে শুধু ধর্ষণই নয়, টেরির পেটে ছুরিও মারা হয়েছে। সেই ছুরির ঘা এতই গভীর টেরি আর জীবনে মা হতে পারবে না।
হ্যারির হাতে তখনও ধরা ছিল টেরির ভাড়া করা গাউন। টেরি বলল,“ফিরে যাও হ্যারি। আমি অশুচি, অপবিত্র,নোংরা। দেখছ না আমার এইডসের টেস্ট হচ্ছে। ” হ্যারি তাও হাত ছাড়ল না। এইডস্ এর রেজল্ট নেগেটিভ হওয়াতে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল ওরা। সাত মাস বাদে বিয়ে হল দুজনের। স্বপ্নের বিয়ে, রেপ সারভাইভারদের জন্য কাজ করা এক সংগঠন স্বেচ্ছায় বহন করল সব ব্যয়ভার। এবার আর ধার করা নয়, একান্ত নিজের গাউন পরে বিয়ে করল টেরি।
বিয়ের ঠিক ২৯দিনের মাথায় টেরিকে ছেড়ে চলে গেল হ্যারি। প্রচণ্ড শীতের রাতে কাঠকয়লার আগুন জ্বালাতে গিয়ে কার্বন মনোক্সাইড পয়সনিং এ মারা গেল হ্যারি। সবাই বলতে লাগল টেরি আসলে অভিশপ্ত। বিষকন্যা। এদিকে টেরির ধর্ষকরাও ধরা পড়ল না। প্রত্যহ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে অপরাধীদের সনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে নিতে ক্লান্ত টেরি একদিন জানিয়ে দিল, আর নয়।  আর পারছি না। আমায় মুক্তি দাও। উচ্ছন্নে যাক তোমাদের অপদার্থ পুলিশী  ব্যবস্থা।
জগৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল টেরি। সবকিছুর জন্য তাকেই দায়ী করা হতে লাগল। অপরিচিতি পুরুষদের দ্বারা ধর্ষণ থেকে অপরাধীদের না সনাক্ত করতে পারার ব্যর্থতা এবং অবশ্যই হ্যারির মৃত্যু। এই সময় টেরির জীবনে টনি গোবাংগার প্রবেশ। অনিচ্ছুক টেরির সঙ্গে প্রায় বলপূর্বক  কথা বলত টনি। হ্যারির কথা জিজ্ঞাসা করত। টেরি যখন হ্যারির কথা বলতে বলতে হাউমাউ  করে বুক চাপড়ে কাঁদত, টনি চুপ করে বসে থাকত নিজের জায়গায়। কোনদিন আগ বাড়িয়ে বাড়িয়ে দেয়নি নিজের হাত। যেদিন দিল,সেই হাতে ছিল একটা অঙ্গুরীয়। টেরি কাঁদতে কাঁদতে জানালো, তার সন্তান প্রসবে অক্ষমতার কথা। টনি সেদিন বলেছিল,“আমার কোনদিন সন্তান হবে কি হবে না, সেটা তো স্বয়ং ঈশ্বরের হাতে। Children are a gift from God," he said. "If we get them, Amen. If not, I will have more time to love you."

হ্যারির সাথে বিবাহের ঠিক তিন বছরের মাথায় টেরি আর টনির বিয়ে হল। যে বিয়েতে টনির বাবাই ছিলেন অনুপস্থিত কারণ এই রকম বহুব্যবহৃত অভিশপ্ত মেয়ের সাথে নিজের পুত্রের বিবাহ তিনি প্রত্যক্ষ করতে চাননি।
বিয়ের ঠিক এক বৎসরের মাথায় টেরিকে আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হল, পেটে অসম্ভব যন্ত্রণা নিয়ে। ডাক্তার জানালেন, মিরাকল্।  টেরি আসন্ন প্রসবা।
আজ টেরি টনি তাদের দুই কন্যা নিয়ে সুখে সংসার করছে। আসুন টেরি কি বলে শুনি, “Today, I am the best of friends with my father-in-law.

I wrote a book, Crawling out of Darkness, about my ordeal, to give people hope of rising again. I also started an organisation called Kara Olmurani. I have forgiven my attackers. It wasn't easy but I realised I was getting a raw deal by being upset with people who probably don't care. The most important thing is to mourn. Go through every step of it. Get upset until you are willing to do something about your situation. You have to keep moving, crawl if you have to. But move towards your destiny because it's waiting, and you have to go and get it.”

No comments:

Post a Comment