Tuesday 27 February 2018


থাকি!আজও আশায় আশায় থাকি।
রাখি!শুধুই তোমার তরেই,রাতদুপুরে জানলা খুলে রাখি।
ফাঁকি! ভাবের ঘরে ম-স্-ত বড় ফাঁকি। 
বাকি?তোমার হিসাব মিলল কবেই, আমার যে সবই বাকি।

মন কেন যে শুধুই খোঁজে বিগড়ে যাবার বাহানা-
মন খারাপের সেই পলে যে শুধুই তোমার ঠিকানা।

Thursday 8 February 2018

"আই লাভ ইউ"-

- হ্যালো!
- হ্যাপি প্রোপজ ডে।
- (হাসি চেপে, ক্লান্ত স্বরে) এটা আবার কোথা থেকে শিখলে?
- আরেঃ সকাল থেকে দেখছি এফবি’তে।
- উফঃ তোমাকে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়াটাই ঝকমারি হয়েছে দেখছি।
- সে তুই যাই বলিস, প্রোপজ মানে তো ঐ আই লাভ ইউ বলা, আমাকে জীবনে কেবল একজন পুরুষই আজ অবধি আই লাভ ইউ বলেছে, আর সেটা হল তুই।
- (হাসি চেপে) হুম!
- সত্যি বলছি, ছোট থেকে আমার কত শখ ছিল, যে কেউ বলবে-। কলেজ থেকে ফেরার সময় মাথা নিচু করেও হন্যে হয়ে খুঁজতাম, কেউ তো বলুক-। অন্য সব বান্ধবীদেরই কেউ না কেউ বললও আমায় কেউ কোনদিন বলল না জানিস। একে কালো, তায় বিশাল মোটা, তায় আবার মাথায় গুড়গুড় করছি। কার দায় কেঁদেছে আমায় ভালবাসতে?
- আঃ। আবার শুরু করলে? তোমাকে যথেষ্ট সুন্দর দেখতে মা-
- সেতো শুধু তুই বলেছিস বাবু, আর কেউ কোনদিন বলেনি।জ্যাঠাইমা- ঠাকুমা- কাকিমা সবাই মা-বাবাকে কথা শোনাত, ভয় দেখাত, কালো মেয়ের বিয়ে দিতে অনেক টাকা বর পণ দিতে হবে।
- ঐ জন্য আমি তোমার বাপের বাড়ির কাউকে দেখতে পারি না।
- পারার কথাও না। তোর মেয়ে বন্ধুগুলোর মত যদি আমার মনের জোর আর বাড়ির সাপোর্ট থাকত, তাহলে আমিও বলতাম, “মারো ঝাড়ু অমন বিয়ের মুখে।“ এরা যেদিন দেখতে গেল, বলল পছন্দ, তোর বাবাকে দেখে আমি কেমন বিগলিত হয়ে গেলাম। আহাঃ এই লোকটা! এই লোকটা বলবে, আই লাভ ইউ।
- ( হাসি আর চাপা গেল না) বাবা? বাবা বলবে? ওফ মা! তুমি পারোও বটে-
- কেন রে? বউ হয়ে বরের মুখে আই লাভ ইউ শুনতে চাওয়াটা কি অন্যায় আব্দার নাকি? তোর বাবার মুখেই তো শুনতে চেয়েছি,পাশের গ্যারাজের আনসার কাকুর মুখে তো নয়?
- হো- হো-হো। মা, ইউ আর টু ফানি।
- সেটাই তো বলবে বাপু। মাকেই তো জোকার বলবে- মা তো ক্লাউন। বিয়ের পর কটা মিষ্টি কথা বলেছে বল তো? কটা সিনেমা নিয়ে গেছে? হানিমুন গেছি কোথায়? না পুরী।সঙ্গে কে?শাশুড়ি, ভাশুর- জা। সেখানে গিয়েও রাঁধো- বাড়ো। এক সাথে সৈকতে বসে চারটে বাদাম ভাজাও খেতে পারিনি। সব জায়গায় তোর জেঠি, ঠাকুমা—কাবাবে হাড় হয়ে উপস্থিত।
- হুম।
- সত্যি কথা বলছি বাবু, তোর বাবারও যে আমাকে খুব একটা পছন্দ ছিল তা নয়।সারাদিন ব্যাঙ্কের কাজ সেরে রাতে বাড়ি ফিরে, বই মুখে বসে পড়ত, আমি গিয়ে বসলে- দুটো কথা বলতে গেলে কি বিরক্তি।
- বাবা ঐ রকমই।
- আমিও তাই ভাবতাম রে বাবু। তারপর একদিন সত্যিটা জানতে পারলাম।
- কি সত্যি?
- তোর বাবার একজন প্রেমিকা ছিল। তোর বাবা সব আই লাভ ইউ তাকেই বলে বসেছে। আমার ভাগে কাঁচকলা- লবডঙ্কা।
- আঃ মা। সে বিয়ের আগে অমন প্রেমিকা সকলেরই থাকে। তুলতুলির আগেও তো আমার জীবনে রিঙ্কি ছিল—
- হ্যাঁ বাবা থাকে। তাকে কেউ হিসেবে ধরে না। কিন্তু ইনি বিয়ের আগেও ছিলেন-পরেও। ওনার স্বামী তোর বাবার ব্যাঙ্কেই কাজ করতেন, মারা যাবার পর উনি চাকরী পান। সেই সময় থেকেই দুজনের মাখোমাখো সম্পর্ক। মহিলারও একটা ছেলে ছিল, তাই উনি তোর বাবাকে বিয়ে করতে রাজি হননি।
- কি যা তা বলছ মা?আজ কেনই বা এইসব কথা বলছ?
- তোদের বাড়ির লোক সব জানত। ছেলের ঘাড় থেকে মহিলাকে নামাতেই আমার সাথে জবরদস্তি বিয়ে দেওয়া। বিয়ের পরও দুজনের সম্পর্ক অবিকৃত থেকে যায়।কি বোকা ছিলাম আমি। বুঝতেই পারিনি—খালি ভাবতাম লোকটা আমায় ভালো তো বাসে শুধু বলতে লজ্জা পায়।
- মাঃ।
-  আমি যখন জানতে পারি,  তোর বয়স পাঁচ। প্রচুর ঝগড়া করলাম, প্রচুর কাঁদলাম, তারপর বললাম, হয় আমি নয় ও। তোর বাবা নির্বিকার মুখে বলল, “ও থাকবে।তুমি দ্যাখো।“
- মা এসব কি?
- হ্যাঁ বাবা। তোর মনে আছে? একদিন তোতে আমাতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম, অনেকক্ষণ গড়ের মাঠে বসে রইলাম, আমি কাঁদছি আর তুই খেলছিস। কি আনন্দ তোর। মাঝে মাঝেই এসে আমায় জড়িয়ে ধরছিস।তোকে ছেড়ে মরার কথা ভাবতেও পারলাম না। ভাবলাম তোকে নিয়েই রেলে গলা দেব। টিকিট কেটে স্টেশনেও গেলাম, একটার পর একটা ট্রেন এল- সামনে দিয়ে চলেও গেল। রোদের তাত, সারাদিনের খালি পেট, তুই আমার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলি, একবার করে রেললাইনের দিকে তাকাচ্ছিলাম, একবার করে তোর মুখের দিকে। পারলাম না জানিস। বড় ভীতু তোর মা, বাবা। মরতেও পারল না। বেশ বুঝলাম যাবার কোন জায়গা নেই, মাথা নিচু করে ফিরে গেলাম তোর বাবার কাছে।
- মা এসব কথা আমাকে কেন কোনদিন বলোনি-
- বলিনি বাবা, বলে কি হত? ভালোই তো ছিলাম তোতে –আমাতে। তোর বাবাকে সচেতন ভাবেই কেটে ফেলে দিয়েছিলাম- শুধু দায়িত্ব- কর্তব্যের কেজো সম্পর্কটুকু বাদে। তোকে নিয়ে বাঁচতে শিখলাম— তুই হয়ে উঠলি আমার সবথেকে বড় বন্ধু। তুই ই শেখালি নিজের শর্তে বাঁচতে, তোর কথাতেই হোম ডেলিভারির কাজ শুরু করলাম। তুই’ই বললি আমায়, “আই লাভ ইউ।“
- আই লাভ ইউ মা।
- তবে কেন বাবা, এই অসহায়, কালো মোটা বুড়িটাকে ছেড়ে মরতে যাচ্ছিস বাবা?
- মা! তুমি কি করে?
- আমি জানি বাবা, ডিভোর্সের পর আজ তোর প্রথম বিবাহবার্ষিকী। জানি তোর মন খুব খারাপ। বিশ্বাস কর, আমারও। সেই যে রিঙ্কি যখন তোর মন ভেঙেছিল, কত অভিশাপ দিয়েছিলাম রিঙ্কিকে মনে পড়ে?ভাগ্যিস ও শোনেনি। আজকাল যখন বাজারে দেখা হয়, আর পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে বলে, “কেমন আছো কাকিমা?” এত লজ্জা করে কি বলব।
- সে সব কিছু নয় মা। আমি ঠিক আছি।
- না বাবা। তুই ঠিক নেই। সকাল বেলা যখন তোর আর তুলতুলির বিয়ের ছবি গুলো আবার দিলি তখন থেকেই ভয় পাচ্ছিলাম। আর একটু আগের স্ট্যাটাসটা—
- মাঃ
- কেন বাবা? কেন? তুলতুলি অন্য কাউকে ভালোবেসেছে, তোকে ছেড়ে অন্য কারো হাত ধরেছে এটাই বড় হয়ে গেল বাবা? আর এই বুড়ি যে সারাজীবন তোকেই ভালোবেসে গেল- তার বুঝি কোন দাম নেই?
- মা আমি কিছু বুঝতে পারছি না। নিজেকে বড় ছিবড়ে মনে হচ্ছে। বেঁচে থাকার কোন কারণই খুঁজে পাচ্ছি না মা। নিজেকে ফেলিওর মনে হচ্ছে-
- আমি যে তোকে ছেড়ে বাঁচতে পারব না বাবা। আমি যে তোর সাথে মরতেও পারব না বাবা। তোর মা টা যে বড় ভীতু বাবা। এই বুড়িটার জন্যই না হয়, একটু চেষ্টা কর না বাবা? কেউ তোকে একদিন পছন্দ করত, আজ আর করে না, তার মানে কি তুই ফ্যালনা হয়ে গেলি বাবা? এতদিন ধরে যে নিজের পরিচয় বানালি, এত বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী সব কি রাতারাতি অর্থহীন হয়ে যেতে পারে? এটা শুধু একটা খারাপ সময়, শনির দশা বলতে পারিস। কেটে যাবে। খুব তাড়াতাড়ি কেটে যাবে। আর যদি নাও কাটে, তুই অভ্যস্ত হয়ে পড়বি। যেমন আমি তোর বাবার সাথে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সময় সব ঘা সারিয়ে দেয় বাবা।
- বলছ মা?
- হ্যাঁ বাবা। যেমন পরীক্ষা এলেই ভয়ে তোর জ্বর আসত, আর পেট কনকন করত। তারপর আমার বুলি শুনে, সব জ্বর- পেট ব্যথা ঝেড়ে ফেলে পরীক্ষা দিতে যেতিস, আর রেজাল্ট বেরোলে এক গাল হেসে বলতিস, “ভাগ্যিস তোমার কথা শুনেছিলাম মা”, তেমনি  এবার ওঠ। উঠে দুটো সিদ্ধ ভাত বসা, গরম গরম দুটো ভাত পেটে পড়লেই সব মৃত্যু বিলাসিতা জানলা গলে পালাবে।কালই গিয়ে কটা দিন ছুটির দরখাস্ত দে, আমার কাছে এসে দুটো দিন থাকত বাপু।
- আই লাভ ইউ মা।
-  কি যেন বলিস তোরা, (একটু লজ্জা লজ্জা গলায়) আই লাভ ইউ টু বাবু।

বইমেলার কবিতা


দেখা হয়ে গেল বইমেলাতে। সেই বহু পরিচিত, দেখেও না দেখা নাক উঁচু ভাব করে চলে যাচ্ছিল। বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল। আচ্ছা আমিই না হয় আগে নত হলাম। নির্ঘাত ভাবল কি গায়ে পড়া মেয়ে রে বাবা।  জিজ্ঞেস করলাম,“তুমি এখানে?” থমকে গেল, পলকের জন্য মুখ থেকে খসে পড়ল বিজ্ঞের মুখোশ।হতভম্বের মত বলল,“কেন আমি বই পড়ি না?” বললাম,“ না মানে ঐ যে কি সব ট্যাব,কিণ্ডল- পিডিএফ ঐ সব পড় বোধহয়।  তাই-”। কোন জবাব দিল না। চোখের দৃষ্টিতে মৃদু ধমক যে দিল বেশ বুঝলাম।চলে যাবে কি এখুনি? আবার অচেনা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেল হৃদয়। মন চিৎকার করে উঠল, আরও কিছুক্ষণ না হয় রইলে কাছে--। শুনতে যে পেল না সেও বুঝলাম। মুখ বন্ধ ছিল যে।
আজ আর কিছুতেই কথার স্রোতকে থামতে দিতে চাই না। তাই বললাম,“ তোমার সেই ডাস্ট এলার্জি?সেরে গেছে বুঝি?” জবাবে ভ্রু কুঁচকে বলল,“কমোনি তো দেখছি এক ছটাকও। ” মোটা বলল বুঝি, রাগ হল না তো?হৃদয়ের বেদনা যেন কিছুটা উপশম হল, বললাম,“নাঃ কমিনি। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বরং বেড়েই গেছি। ” হাল্কা হাসির রোদ খেলে গেল কি দাড়িগোঁফের জঙ্গলে? সুযোগ বুঝে বললাম,“একটা সেল্ফি?” বলল,“সেল্ফাইটিস্ টাও বেড়েছে দেখছি।” বলতে পারলাম না,“কয়েদ করে রাখতে চাই এই মুহূর্তটাকে। যেমন রেখেছি তোমার সঙ্গে কাটানো আরো অজস্র মুহূর্ত।" বলতে পারলাম না, একদলা কষ্ট কোথা থেকে এসে চেপে ধরল বুক আর গলা। ছলছলে চোখকে অন্যদিকে ঘোরালাম, ধরা পড়তে চাই না। কিছুতেই না। সূর্য কি পশ্চিমে ঢলে পড়ল খানিকটা? এখনও একটাও বই কেনা হয়নি। তার হাত ও খালি। এবার যেতে হয় এবং যেতে দিতেও হবে। মন বলল,“ভালো থেকো। ” আর সে? সে বলল,“চলো তোমার ছবিটা তুলে নি”। হাসলাম দুজনেই। ক্যামেরার সামনে হাসতে হয় তো। শাটার বন্ধের সাথে সাথেই কি নেমে আসবে নিশ্ছিদ্র  অমানিশা?না কি সব নিয়ম ভেঙেচুরে দুমড়ে মুচড়ে উল্টোদিকে দৌড়বে পৃথিবী?