Thursday 20 October 2016

অনির (পুজোর) ডাইরি

অনির (পুজোর) ডাইরি ৭ই অক্টোবর ২০১৬
একদম ছোট বেলায় পুজো ছিল নিখাদ আনন্দের উৎসব। পুজোয় প্রতিবছর আমরা দিদার বাড়ি যেতাম। আমার দিদার বাড়ি অর্থাৎ মায়ের বাপের বাড়ি ছিল সুদূর মুর্শিদাবাদ। ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে হলুদ ট্যাক্সি চেপে ফাঁকা হ্যারিসন রোড (এম জি রোড নামটা তখন জানতামই না। )ধরে সাঁইসাঁই করে শিয়ালদা। শিয়ালদা থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জার ধরে ঢিকিধাঁই ঢিকিধাঁই করতে করতে সেই পলাশী। পলাশীতে নেমে বাস (যাতে বাবা কখনই চাপায়নি) বা রিক্সা করে গঙ্গার ঘাট। ঘাট বেড়িয়ে ওপারে ছিল আমাদের গ্রাম, “রামনগর।” আজও মনে আছে মায়ের এক সহপাঠী নিবারণ মামা ঐ ঘাটে নৌকা বাইত। বিত্তগত ভাবে দুজনের মধ্যে যতই তফাৎ থাকুক না কেন, দুজনের বার্তালাপ থেকে তা কখনই বোঝা যেত না।
ঐ সময় দিদার বাড়ি গমগম করত। মায়েরা চার বোন, তিন ভগ্নীপতি, আর আমরা পাঁচ ভাইবোন। এছাড়া খুড়তুতো পিসতুতো মামা মাসী ছিল উনিশ জন। কি হুল্লোড়ে যে কটা দিন কাটত তা বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের প্রজন্মের আমি প্রথম কন্যা সন্তান তার ওপর আমার জন্মও রামনগরে, ফলে আমার খাতিরই ছিল আলাদা। মামা মাসিদের কোলে কোলেই ঘুরতাম। সময় থেমে থাকে না। মামাদের অনেকে আর্মিতে যোগ দিয়ে গ্রাম ছাড়ল। মাসিরা বিয়ে করে দূরে দূরে সরে গেল। দাদারাও কবে যেন হঠাৎ করে বড় হয়ে গেল। বড়দা ছাড়া আর কেউ যেত না পুজোয়। ফলতঃ আমার পুজো হয়ে পড়ল এক নিরানন্দ অত্যাচার বিশেষ। ক্লাশ সিক্সের পর আর পুজোয় রামনগর যাইনি।
পুজোর হাওড়া ছিল অপরূপা। ঐ আলোকসজ্জা, জনসমাগম, বিভিন্ন আঙ্গিকের প্রতিমা, রোল, ফুচকা, চাউমিন- কিন্তু তা সত্বেও আমার পুজো নিরানন্দময়ই রয়ে গেল। মা ছিল পোস্টাফিসের বড়দিদিমণি। পুজোয় ছুটি ছিল মাত্র দুদিন- অষ্টমী আর দশমী। সকাল বিকাল রান্নাঘর এবং আনুসাঙ্গিক গৃহকর্মাদি সামলে অফিস করে বাড়ি ফিরে মা এতটাই ক্লান্ত থাকত যে ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা দুটো বার্তালাপ করার মত শক্তিও অবশিষ্ট থাকত না। আর বাবা? বাবার গোটা পুজো জুড়ে থাকত হিরেন কাকু। বাবার সহপাঠী, জাহাজে রেডিও অফিসার ছিলেন। পুজোর ছুটিতে বাড়ি আসতেন এবং এলেই বাবাকে এক মুহূর্তের জন্য ছাড়তেন না। আড্ডা মেরে অপরাধীর মত বাবা বাড়ি ঢুকত রাত সাড়ে দশটায়। সন্ধা থেকে ঠাকুর দেখতে যাব বলে সেজে গুজে বসে থাকতাম আর বাবা বাড়ি ঢুকলেই জুড়তাম প্রবল কান্নাকাটি। শেষে রেগেমেগে বাবা হিরেণ কাকুকে বলেই দিল,“ আমাকে পুজোর সময় একদম ডাকবি না। তোর জন্য ওকে সময় দিতে পারি না। ” কিন্তু কাকু ছিল নাছোড়বান্দা। সে বছরই ডিসেম্ব্যার মাসে উনি মারা যান। সেটা ছিল বাবরি মসজিদ ভাঙার বছর। 
হিরেন কাকুর না থাকা আমার পুজোয় বিশেষ কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। মায়ের ক্লান্তি কমে তো নিই, উল্টে মেজাজ আরো খিটখিটে হয়ে উঠতে লাগল। আর বাবাকে দখল করে নিল বাবার স্কুলের বন্ধুদের গ্রুপ। ২০০২ সাল থেকে আমার পুজোর রাশ আমি নিলাম। এক সিনিয়র দিদির সাথে শুরু হল কলকাতার ঠাকুর দেখা। ষষ্টিতে নর্থ আর সপ্তমীতে সাউথ। বেলা নটা নাগাদ হাওড়া স্টেশনে জড়ো হতাম আর তারপর বাসে করে আর নয়তো পদব্রজে চলত পুজো পরিক্রমা। সন্ধ্যাবেলায় কাতারে কাতারে সুসজ্জিত নরনারী যখন ঠাকুর দেখতে বের হত, কালিঝুলি মেখে ক্লান্ত শরীরে ফোস্কা পড়া পায়ে আমরা তখন বাড়ি ফিরতাম। বছর খানেক পর সঙ্গী বদল হল অপর্ণাদির পরিবর্তে পম্পা কিন্তু রুট বদলাল না। বোসপুকুরের সেই ভাঁড়ের প্যান্ডেল, বিস্কুটের প্যান্ডেল, সিংহীপার্কের কাঁচের চুড়ির প্যান্ডেল এদের সাথেই দেখা। ২০০৮ থেকে বিগত আট বছর শুধুই সঞ্চিতার সঙ্গে-
গত বছর থেকে আমার পুজোয় নতুন সংযোজন অন্তু অর্থাৎ অন্তরা। সারারাত জেগে ঠাকুর দেখার ইচ্ছাটা ছিল আমার কিন্তু অন্তুুর পূর্ণ সমর্থন তথা সহযোগিতা না থাকলে ব্যাপারটা পুরো ঘেটে যেত। ঠাকুর দেখে বেড়িয়ে গাড়ি খুঁজে বের করার ব্যাপারে অন্তুর সুবিশেষ দক্ষতা আছে। আলোকসজ্জিত মধ্য বা ভোর রাত্রে আমার কলকাতার সব রাস্তাকেই একই রকম লাগে তথা সব গাড়িকেই “এই তো আমাদের গাড়ি” বলে বোধ হয়। গত বছর সঞ্চিতা, অন্তরা এবং আমার সাথে চৈতালীর ও যাবার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ডেঙ্গুর আক্রমণ সব প্ল্যান কেঁচিয়ে দিয়েছিল। এবছর বিশেষ করে চৈতালীর জন্যই আমরা বেড়োলাম আর সারাদিন অফিস করে রাত দশটায় বাড়ি ঢুকে চৈ বের হল শুধু আমাদের জন্য।
গতবছরের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ। চেতলা অগ্রণী হয়ে সুরুচি যেতেই লেগেছিল প্রায় তিন ঘন্টা । তার মধ্যে দেড় ঘন্টা শুধু অভেদ্য জ্যামেই আটকে ছিলাম আমরা। এবার তা হল না, সৌভাগ্যবশত রাস্তা ছিল বেশ ফাঁকা। মিনিট পনেরোর মধ্যেই চেতলা। তুলনামূলক ফাঁকায় দেখে, ওখান থেকে বাদামতলা আষাঢ় সংঘ,৬৬ পল্লী হয়ে, বাঁশের ফাঁক দিয়ে গলে দেশপ্রিয় পার্কের হাজারহাত ও নির্বিঘ্নে হয়ে গেল। আমরা ফাঁসলাম ত্রিধারায়। কি অসম্ভব ভিড়, আর একটিও পুলিশ নেই। লাইনের বালাই নেই, ঠেলাঠেলি, লোকে নির্লজ্জ ভাবে সেল্ফি তথা ঠাকুরের ছবি তুলেই যাচ্ছ, কেউ তাড়া দেবার নেই। বাচ্ছাগুলো ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে বিরক্ত হয়ে উঠল, ভিড় আর এগোয় না।
ত্রিধারা দেখে যখন বেড়োলাম তুত্তুরী কাঁদতে লাগল। বেচারা আর হাঁটতে পারছে না। টিনটিন অর্থাৎ অন্তুর পুত্রের যাবতীয় সদুপদেশ আমাদের সম্মিলিত আদর সব বিফল। শেষে অন্তুর কোলে উঠে মুখে আবার হাসি ফিরে এল। অন্তরা মাসির কোলে চেপে বেশ খানিকটা যাবার পর আবার পূর্ণোদ্যমে হাঁটতে লাগল। একটু দূরেই হিন্দুস্তান পার্কে আর আমরা মা মেয়ে নামলাম না। সঞ্চিতাও রয়ে গেল গাড়িতেই। টিনটিনদাদা তুত্তুরীর জন্য ছবি তুলে আনতে ভোলেনি অবশ্য।
পরবর্তী গন্তব্য মুদিয়ালী। মুদিয়ালী, শিবমন্দির, লেক ইয়ুথ ক্লাব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল নির্বিঘ্নে। পরবর্তী গন্তব্য হরিদেবপুর ৪১ পল্লী, অজেয় সংহতী( এইরে নামটা ভুলে গেছি) এছাড়াও বেশ কয়েকটি ক্লাব, যারা মণ্ডপ সজ্জা তথা প্রতিমার নিরিখে কলকাতার অনেক নামি পুজোকে হেলায় হারিয়ে দিতে পারে।
শেষ গন্তব্য সুরুচি সংঘ। ঘড়ির কাঁটা ততক্ষণে ৫টা ছুয়েছে। আকাশ ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে আকাশের রঙ। বিমোহিত হয়ে দেখছিলাম আমরা, হঠাৎ পিছন থেকে অন্তরা জিজ্ঞাসা করল, “হ্যাঁরে অনি তোর বর কবে আসবে?” চমকে উঠলাম আমি, ‘বর’? আমার বর? তার তো পুজো বলে কিছু নেই। সে তো ওসি ডকুমেন্টেশন। তার কাজ আপাততঃ সিঙ্গুরের টাটাদের কারখানা ভাঙাভাঙির ছবি তোলা, অ্যালবাম বানানো এবং আর কি তা সে নিজেও জানে না। কাল দুপুর পৌনে চারটে থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা অবধি চুপ করে একাকী বসেছিল সিঙ্গুরের বিডিওর ফাঁকা চেম্বারে কখন অ্যালবাম প্রিন্ট হয়ে আসবে তার প্রতীক্ষায়। কি চুড়ান্ত মন খারাপের সঙ্গে তাকে তারই এককালে বলা কথাগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছিলাম, “চাকরী মানেই চাকরগিরি”। আবার কি?সব পেশারই কিছু দাবী থাকে। এই আমাদের চৈতালী কাল রাত দশটায় বাড়ি ঢুকে সাড়ে দশটায় আমাদের সাথে বেড়িয়ে ভোর সাতটায় বাড়ি ঢুকবে। বাড়িতে পদার্পণ করে নাওয়া খাওয়া সেরেই সকাল আটটায় দৌড়বে, বেলা দশটায় ক্লায়েন্ট মিটিং তারপর পাহাড় প্রমাণ কাজ। আর পুলিশ গুলো? আমার এক সদ্য পরিচিত পুলিশ বন্ধুকে (দাদাই বলা যায়) মজা করে বলেছিলাম,“পুজোয় ডিউটি করেন বলেই তো পুজোর লেটেস্ট ফ্যাশন তো আপনারাই সর্বাগ্রে দেখতে পান। ” উনি বিমর্ষ ভাবে বলেছিলেন, “বিশ্বাস কর, কিচ্ছু রেজিস্টার করে না মাথায়। যন্ত্র হয়ে যাই। নিষ্প্রাণ রোবট। ” আজ আনন্দময়ীর শুভাগমনে আশা করব এদের পুজোও ভাল কাটুক। শুভ ষষ্ঠী
(চলবে গোটা পুজো জুড়ে, আশা করি)


অনির(পুজোর) ডাইরি ১০ অক্টোবর ২০১৬
ঘুম পাচ্ছে, কি প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। পুজোর ধকল কি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ইচ্ছা ছিল মেয়ে নিয়ে আজ সকালে শোভাবাজার রাজবাড়ি যাব। সাথে চৈতালীর প্রস্তাবিত পাথুরিয়াঘাটার খেলাৎ ঘোষের বাড়িটাও ঘুরে নেব। গাড়ি নেই, বাস বা ওলাই ভরসা। সেই মত ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলামও কিন্তু তুত্তুরীকে কিছুতেই ঘুম থেকে তোলা গেল না। চেষ্টা করা মাত্রই আমার মেয়ে এমন হাঁউমাউ জুড়ে দিল, সাথে যথাযথ সঙ্গতে আমার মা। অবশেষে মায়ের ফরমান,“মেয়েকে নিয়ে যাবি না।” ভাল কথা। তাহলে আমি একা যাই? “মেয়েকে ছেড়ে কোথাও যাবি না।”
অবস্থা সুবিধার নয় বুঝে পরিকল্পনা বাতিল করলাম। এমনিতেই কাল থেকে যা অশান্তি চলছে। আমার নতুন মূল্যবান লিপস্টিকটির পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ঘটিয়েছে আমার কন্যা। শখ করে কিনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সারা বছর আর লিপস্টিক না কিনলে উশুল হয়ে যাবে, গোটা মাসই চলল না। এই নিয়ে পঞ্চম লিপস্টিক ভাঙার জন্য বেশ কয়েক ঘা (আড়াই ঘার বেশি নয়) উত্তমমধ্যম দিলাম। ফলশ্রুতি মেয়ের থেকেও প্রবল বেগে আমার মা কাঁদতে লাগল এবং বাবা পাঞ্জাবি চড়িয়ে গৃহত্যাগে উদ্যত হল। শৌভিকের সাথে ফোনে গৃহযুদ্ধের কথাটা আর বলছি না।
তাই আজ আর অবাধ্য হতে সাহস হল না। মা আর মেয়ের সাথে ঝগড়া নিয়ে কোন চাপ নেই, রোজ হয়। কিন্তু আমার বাবা এবং আমার বর আমার সবথেকে বড় সমর্থক। এদের আমি কখনই চটাই না। বর তো ১৫ মিনিট বাদে সরি বলতেই মাপ করে দিল। কিন্তু বাবা দেখি সকাল থেকে একটাও বার্তালাপ করছে না। থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। গায়ে পড়েই ভাব করতে গেলাম।
১৯৫৮ সালে হাওড়ার আইজ্যাক রাফায়েল বেলিলিয়াস স্কুল থেকে স্কুল ফাইনাল( তখন ম্যাট্রিক ছিল কি? এই রে ভুলে গেছি) পাশ করেছিল বাবারা ৩৬ জন। কমতে কমতে বর্তমানে জীবিত আছেন মাত্র ৮ জন। যাদের মধ্যে তিন জন বাইরে থাকেন এবং তাঁরা আদৌ জীবিত নাকি কোন অঘটন ঘটে গেছে এ সম্পর্কে বাকিরা অন্ধকারে। এককালে বাবাদের বিশাল গ্রুপ ছিল। যারা ঐ বছর স্কুল ফাইনাল পাশ করেছিল এবং যারা পাশ করেননি বা বিভিন্ন ক্লাশে অকৃতকার্য হয়ে পিছিয়ে পড়েছিল সকলকে নিয়ে জমাটি আড্ডা বসত পুজোর কটা দিন। নাওয়া খাওয়া ভুলে আড্ডায় দৌড়ত বাবা। বিত্তগত বা রাজনৈতিক মতাদর্শগত ফারাক বাবাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পারেনি। রোজ একাধিক ব্যক্তি কিছু না কিছু খাওয়াত। সুগার প্রেশার প্রস্টেট কোলেস্টরল হওয়া প্রৌঢ়- বৃদ্ধের দল নিজ নিজ গৃহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন পূর্বক কদিন সর্বভূক হয়ে উঠত- চিংড়িমাছের চপ, বড় বড় বেগুনী, মোচার চপ, বাগনানের ছানাপোড়া, রসগোল্লা, আমতার পান্তুয়া, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, হাওড়ার বিখ্যাত দুলাল ঘোষের রাবড়ি, ভুরভুরে ঘিয়ের গন্ধ ওঠা মোহনভোগ, ভীম নাগের সন্দেশ, শেঠ সুইটসের কালো গজা, খাস্তার গজা, খাস্তার কচুরী টক মিষ্টি চাটনী দিয়ে,প্যাটিস, পেস্ট্রী, কোল্ড ড্রিক্স ইত্যাদি ইত্যাদি। সব একদিনে হত না বটে তবে হত অবশ্যই। যে যেমন পারত, সাধ্য তথা সামর্থ্য অনুসারে নিয়ে আসত এবং পরম তৃপ্তি ভরে বাকিরা তা সেবন করত। বাবা যখন বাড়ি ফিরে খোশ মেজাজে গল্প করত, ঈর্ষায় আমি আর মা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতাম।
সে আড্ডা আজ আর নেই। কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র আট জনে। সকলেই পচাত্তর ঊর্দ্ধ। বাবার ভাষায় একে একে নিভিছে দেউটি(ভুল হলে মাপ করবেন। আমি কোটেশন ব্যবহারে বিশেষ দড় নই )। কিন্তু এই আট জন বৃদ্ধ জেদের বশে আজো পুজোর প্রতিটা দিন আড্ডা দেয়। সময় হলেই ঝনঝনিয়ে বেজে ওঠে একসাথে বাবার মোবাইল এবং বাড়ির ল্যাণ্ডফোন। এক যোগে একাধিক বৃদ্ধ ডেকে ওঠে,“ কি রে অলোক,আয়? তুই না এলে জমছে না যে”। বাবাও ওমনি গুটি গুটি পুজোর জামা বা পাঞ্জাবি গলিয়ে চুলে ব্যাক ব্রাশ করে নিজের অভিমানিনী স্ত্রী তথা নাতনীকে বলে, “যাই সোনা(তুত্তুরী অবশ্যই। মাকে সোনা বললে তৎক্ষণাৎ জবাই)। এবছর আট সামনের বছর কজন থাকি? ”
বাবাদের সেই সাধ্য বা পাচন ক্ষমতা আর নেই। খাবার বহর ও অনেক কমে গেছে তবু পালা করে রোজ কেউ কিছু আনে। আজ বাবার পালা। বন্ধুরা প্যাটিস খেতে খেয়েছে। দশটায় সবাই সমবেত হবে, তাই সাতটায় বাবা বেরোচ্ছিল সুগার এণ্ড স্পাইস থেকে আটটা প্যাটিস কিনতে। ফিরে এসে চান করে দাড়ি কামিয়ে সেজেগুজে বেরোবে।
ভাব করার তাগিদে বললাম আমিই কিনে এনে দিচ্ছি। তবে সুগার এণ্ড স্পাইস কেন? খাওয়ালে মিও আমোরে বা ক্যাথলিন খাওয়াও। বাবা অনেক মাথা চুলকে বলল, “ ঠিক আছে। এনে দিলে তো খুব ভালই হয়। তোর যা ইচ্ছে কিনে আন। তবে আটটা এক জিনিস আনিস। ”
তৈরি হয়ে যখন বেড়োলাম ঘড়ির কাঁটা সোয়া আটটা দেখাচ্ছে। ফাঁকা ফাঁকা পথঘাট। কে বলবে কাল গলির মুখ থেকে আমাদের বাড়ি ঢুকতে চার মিনিটের রাস্তা তুত্তুরী আর আমি বারো মিনিটে পেরিয়েছি এবং তাও গোটা পনেরো লোককে দুহাতে ঠেলে বা কনুইয়ের গুঁতো মেরে। বাবা টাকা দিয়েছিল রিক্সা করে যাওয়ার(মহানন্দে হাত পেতে নিলাম, ডি এর যা হাল আর পুজোর মাসের যা খরচা) জন্য। একটাও রিক্সা নেই। ভুল বললাম, রিক্সা আছে রিক্সাওয়ালা নেই। একটি রিক্সা দেখতে পেলাম যার চালক লম্বা ঠ্যাং বার করে রিক্সায় শুয়ে ঘুমোচ্ছে, বেশ কয়েকবার ,“ দাদা? ভাই? এই? ভাড়া যাবে?” বলাতেও সাড়া শব্দ করল না।


হাঁটতে হাঁটতে গেলাম বড় রাস্তায়। অন্য সময় টোটো আর বাইকের ভিড়ে রাস্তা পেরোনো যায় না। তাজ্জব হয়ে গেলাম সাড়ে আটটা বাজছে আজ একটাও বাইক নেই। মিনিট পনেরোয় মাত্র দুটি টোটো গেল। এবং দুটিই সংরক্ষিত। বয়স্ক ঠাকুমা দিদিমাদের নিয়ে ভোরবেলা নাতনীদের দল(আজ্ঞে হ্যাঁ একটিও ছেলে ছিল না। বাবুরা বোধহয় সারারাতের ধকল সামলে কেউ ঘুম থেকেই উঠতে পারেননি)। আরো দশ মিনিট পর একটি বাস পেলাম। ৬৩ নম্বর ডোমজুড় গামী বাস হাওড়ার বাসিন্দাদের কাছে সাক্ষাৎ বিভীষিকা। ব্যস্ততম মুহূর্তেই ওদের যা গতি থাকে, বিরক্ত অফিস যাত্রীরা চিৎকার করে কন্ডাকটরের গুষ্টি উদ্ধার করে দেয়, “ আর বাস চালিয়ে কাজ নেই। গামছা পেতে ভিক্ষে কর গে যা। কিরে ? হাওড়া হাওড়া করলি তাও উঠল না? যা কোলে করে তুলে নিয়ে আয়”। কখনও কখনও যাত্রী নিজেরাই লোক ডাকে, “ আসুন দাদা আসুন। দেখছেন না আপনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে? আপনি দয়া করে বাসে উঠে এদের উদ্ধার করুন” ইত্যাদি কত যে মজার সংলাপ শোনা যায় ৬৩ নম্বর বাসে উঠলে। আমার কপালে সেই ৬৩ই জুটল?
শম্বুকে লজ্জিত করে বাস যখন নামালো কপালে করাঘাত করে দেখি মিও আমোরে বন্ধ। এটা হাওড়ার ব্যস্ততম মিও আমোরে, আমার দৈহিক বিভঙ্গে হতাশা লক্ষ্য করে এক বয়স্ক প্রাতঃভ্রমণকারী বললেন, “ সারা রাত ধরে লোকে এত খেয়েছে-”। বাস টোটো কিচ্ছু নেই। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম ক্যাথলিন। এটা খোলা। সত্যিই হাট করে খোলা। এসি চলছে না। একটা ফ্যান ঘুরছে মাত্র। এবং দোকানে কেউ নেই। দোকানদার ও না। সারি সারি শোকেশ ভর্তি খালি ট্রে। কেবল গোটা তিনেক শুকনো কেক আর গোটা দশেক ক্রীম রোল পড়ে আছে। দেখেই অভক্তি হয়। বুঝলাম কেন বাবা সুগার এণ্ড স্পাইসে যাচ্ছিল। উল্টো দিকেই দোকান, খোলা এবং বন্ধ। অর্থাৎ দোকান খোলা কিন্তু দরজা বন্ধ, বাতানুকূল যন্ত্র চলছে। রাস্তা পেরিয়ে যাব কি? লম্বা লাইন, নারী পুরুষ নির্বিশেষে বাইক স্কুটার সাইকেল সহ লাইন দিয়েছে রেয়াজী খাসির মাংস কিনবে বলে। দোকানটা ৫০০মিটার দূরে তো হবেই বা আরো বেশি। আজ নবমী কি না? রাত তিনটে থেকে ঐ দোকানে লাইন পড়ে।

লাইন টপকে চিকেন প্যাটিস এবং মায়ের ফরমাইশ অনুসারে এক ব্যাগ মিষ্টি কিনে যখন বাড়ি ফিরলাম বাবা তৈরি হয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে। আপাততঃ যা এনেছি তাতে উভয়েই খুব খুশি বাবা গরম প্যাটিশ আর মা পান্তুয়া (আজ্ঞে হ্যাঁ খাঁটি বাঙালি রস জবজবে কালো পান্তুয়া ঐ খোট্টা গুলাবজামুন নয়), খাস্তার গজা আর তুত্তুরীর প্রিয় মিষ্টি চাউমিন ( সীতাভোগ) পেয়ে। আপাততঃ শান্তিপূর্ণ গৃহকোণ, যদিও কতক্ষণ এই শান্তি স্থায়ী হবে আমি জানি না। কারণ আমরা চাটুজ্যেরা খুব একটা শান্তিপূর্ণ হই না কি না !😈

Friday 30 September 2016

অনির পুজোর ডাইরি ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১৬


শুভ মহালয়া। মহালয়া এলেই ছোট বেলার কথা বড় বেশি মনে পড়ে। আমাদের সেই পুরানো দেড়-দুশো বছরের ভাঙা বাড়ি, সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই তিন দিক রোয়াক দিয়ে ঘেরা বিশাল উঠোন। উঠোনের পূবে আর পশ্চিমে খোলা বাগান, যা আমাদের ছোটবেলায় প্রায় জঙ্গলে পর্যবসিত হয়েছিল। কি গাছ ছিল না আমাদের সেই বাগানে? আম, কাঁঠাল, নাগকেশর, বেল, যজ্ঞিডুমুর, নিম, বট আর অশ্বত্থ গাছ যুগলে জড়াজড়ি করে উঠেছিল। কৃষ্ণ এবং রাধাচূড়া দুটোই ছিল পুবের বাগানে। পেয়ারা গাছ ছিল গোটা দুয়েক। এত মিষ্টি পেয়ারা বাজারে পাওয়া যেত না, আজোও যায় না। এছাড়াও জেঠাইমার লাগানো কত যে ছোট ছোট গাছ ছিল- যেমন তুলসি, দোপাটি, অপরাজিতা, কৃষ্ণকলি, সন্ধ্যামণি, পয়সাপাতা (যাকে এখন বলি মানিপ্ল্যান্ট)। কলকে ফুলের গাছ, বাসক পাতার গাছ ও ছিল, আমরা ভাইবোনেরা ছোট বেলায় কলকে আর বাসক ফুল পেড়ে পিছনের মধুটা সুড়ুত করে চুষে খেতাম। সাবধানে খেতে হত, অনেক সময় লাল পিঁপড়ের দল আমাদের আগেই ঢুকে বসে থাকত। পাঁচিলে পাঁচিলে হয়ে থাকত ডুমুর গাছ। কারো সামান্য শরীর বিগড়লেই জেঠাইমা ডুমুর পাড়িয়ে রাখত- আর বেশ কিছুদিন ধরে তাকে হয় ডুমুরের ঝোল, নয়তো ডুমুর ভাজা আর  নাহলে ডুমুর সিদ্ধ খেতে হত।  উত্তরের পাঁচিলের লাগোয়া ছিল একটা জবা গাছ, লাল টকটকে জবা। থোকা থোকা ফুটে থাকত, তবে পাড়তে হলে পাঁচিলে উঠতে হত, ভিত হীন নড়বড়ে পাঁচিল আর কেউ উঠলেই পাশের বাড়ির জন দাদার মা প্রবল হল্লা জুড়ে দিতেন। “ওগো তোমাদের দেবী আর ঝুনু পাঁচিলে উঠেছে গো। পড়ে মরবে গো।” অনেক বছর হল মারা গেছেন ও বাড়ির জেঠাইমা, দীর্ঘ দিন পঙ্গু হয়ে পড়েছিলেন- জবা গাছটাও অবশ্য কেটে দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৫-৯৬ এ।
আজ কেন যে ছোট বেলার জন্য এত মন খারাপ করছে? কত লোক ছিল আমাদের বাড়িতে- ঠাকুমা, মেজ পিসি (যাকে আমরা সবাই ডাকি দিদি বলে) জেঠু, জেঠাইমা, ছোট কাকু, কাকিমা, বাবা, মা, আর আমরা তিন ভাইবোন। দিদিভাই অর্থাৎ আমাদের জেঠতুতো দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল সেই আশির দশকের শুরুতে। পড়েছিলাম আমি আর আমার দুই খুড়তুতো ভাই অয়ন আর অনিন্দ্য। মা-কাকিমা  দুজনেই অফিস বেরিয়ে না যাওয়া অবধি আমরা ভিজে বেড়াল হয়ে থাকতাম, যেই ওঁরা বেরিয়ে যেতেন, আমাদের আর পায় কে? ঠাকুমা বলত, “বামুন গেল ঘর তো লাঙল তুলে ধর।” কি প্রবল দুরন্তপনা করতাম আমরা, ঠাকুমা-পিসি হিমশিম খেয়ে যেত। সারা দুপুর কেউ ঘুমতাম না, আর যেই মায়েরা এসে পড়তে বসাত, অমনি চোখ ঢুলঢুল। বেদম ঠ্যাঙানি খেতাম, ভাইয়েরা একটু বেশি, আমি একটু কম, কারণ ঠাকুমার ভয়ে সকলের মায়েরাই করত কি, বাচ্ছাদের নিজেদের ঘরের দরজা জানলা বন্ধ করে পেটাত। আমার দুই ভাই দাঁড়িয়ে মার খেত, আর আমি প্রবল চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বিশাল সাবেকি খাটটাকে ঘিরে গোল গোল ঘুরতাম। মা লাফিয়ে খাটে উঠলে আমি খাটের তলায় ঢুকে যেতাম। এত সাবধানতা সত্ত্বেও দু এক ঘা স্কেল বা হাতপাখার ডান্ডার বাড়ি পড়েই যেত। চিৎকারের কারণ ছিল আমার জেঠু। দোতলার বিশাল দালানে একটা খাট পাতা ছিল, ওখানে অফিস থেকে ফিরে এসে বা ছুটির দিনে জেঠু শুয়ে শুয়ে বই পড়ত। মাথার কাছে একটা টেবিল ল্যাম্প তার দিয়ে বাঁধা থাকত। আমার কান্নার আওয়াজ দরজা টপকে জেঠু অবধি ঠিক পৌঁছত, আর তৎক্ষণাৎ উনি বারন্দা থেকে মুখ বাড়িয়ে চিৎকার করতেন, “ওগো শুনছ। মেয়েটাকে সরমা বোধয় মেরেই ফেলল।” জেঠিমা ছিল চিরদিন আমার বিশাল আশ্রয়। জেঠুর গলা শোনার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই জেঠিমা এসে ধড়াম ধড়াম করে দরজা পিটত। “খোল। দরজা খোল। মেয়েটাকে মেরে ফেলবি নাকি?” বাধ্য হয়ে মা দরজা খুলে দিত আর প্রতিবার একই মিথ্যা কথা বলত, “বিশ্বাস কর দিদি, মারিনি। শুধু মারব বলে স্কেলটা দেখিয়েছি।”
ইশ কি সব দিন ছিল, স্বপ্নের দিন। ভাবিনি মৃত্যু কোনদিন আমাদের বাড়িতেও থাবা বসাবে,  প্রথমেই গেল আমার দিদা সেটা ১৯৯৮ সাল।  তারপর বড় পিসেমশাই, ২০০৪,বয়সে উনি ঠাকুমার থেকেও বড় ছিলেন অবশ্য। তারপর ঠাকুমা ২০০৫ এ, ঐ বছরই সেজো পিসেমশাই, ২০০৬ এ বড় পিসি, তারপর ২০০৯ এ ছোট পিসেমশাই, ২০১২-১৩এ বড় মেসোমশাই আর ছোট কাকু আর ২০১৪ এ আমার জেঠু। বাকিরা ঠুকঠুক করে ব্যাটিং করছে বটে, কিন্তু ক্রীজে থাকার ইচ্ছা কারোরই নেই।
জেঠু সেই ১৯৮২ থেকে হাইসুগারের রুগী ছিলেন, ২০০১-০২ এ পেসমেকার বসাতে হয়েছিল। কি কষ্ট করে যে জেঠাইমা ওনাকে বাচিয়ে রেখেছিলেন, জেঠিমার জীবনটাই ঘুরত জেঠুকে কেন্দ্র করে। সকাল থেকে জেঠু কখন কি ওষুধ খাবে, কি দিয়ে প্রাতঃরাশ সারবে, দুপুরে ক-রকম পদ রান্না হবে ( তেতো, ডাল, একটা ভাজা, একটা পোস্ত, মাছ/মাংস নাকি ডিম, টক দই ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার), দুপুরে কি ফল খাবে (সুগার রুগীর সব ফল চলে না, আবার একই ফল রোজ দিলে জেঠু খেতে চাইবে না), রাতে কি খাবে সব ছকা থাকত জ্যাঠাইমার। এ ছাড়া ছিল চা, কত বার যে চা খেত আমার জ্যাঠামশাই তার ইয়ত্তা নেই। এত যত্নের পরেও জেঠুর কোষ্ঠ পরিষ্কার হল কিনা এটা ছিল জ্যাঠাইমার সবথেকে বড় উদ্বেগের কারণ। সব কাজ স্বহস্তে করত, এমনকি বাজার –দোকান, বিল দেওয়া পর্যন্ত। সেই জেঠিমা, জেঠুর মৃত্যুর পর কেমন যেন জবুথবু হয়ে পড়ল। জ্যাঠাইমার শরীরেও যে এত রকম রোগ বাসা বেঁধেছে জানতই না কেউ। সব দুধ টুকু ছানা কাটিয়ে জেঠুকে খাইয়ে, চিরদিন দেখতাম জ্যাঠাইমা চামচ দিয়ে বাটি চেঁচে সর টুকু খাচ্ছে, তাও আমাদের দেখতে পেলে হাঁ করিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দিত। আর আজ ডাক্তার বলছে, ক্যালসিয়ামের অভাবে সব হাড় ক্ষয়ে গেছে, যে কোন মুহূর্তে দেশলাই কাঠির মত ভেঙে পড়তে পারে।
একই রকম ভালোবাসা দেখেছিলাম বড় মাসি আর মেসোমশাইয়ের মধ্যে। মেসোমশাইয়ের পারকিনসন্স আর অ্যালজাইমারস দুটো মারণ ব্যাধিই ছিল। ভুলে যেতেন সবকিছুই, রাতবিরেতে প্রকৃতির আহ্বানে উঠে উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতেন। বাথরুম খুঁজে পেতেন না, নাই নিজের শোবার ঘর। দাদারা বাড়ির দেওয়ালে, বাথরুমের দরজায় কাগজ মেরে রাখত, তাও পারতেন না। সেই উদ্বেগে রাতে বড় মাসির ঘুম আসত না। আর দিনের বেলায়ও ওনাকে চোখের আড়াল করা যেত না, পলকের মধ্যেই দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে যেতেন। দীর্ঘদিনের পরিচিত মানুষটা হঠাৎ হয়ে উঠেছিলেন একান্ত অপরিচিত এক ব্যক্তি। নিজের সমস্ত শক্তি-সামর্থ্য-সাধ্য নিকড়ে দিয়েও ওনাকে বাঁচানো গেল না। মেসোমশাইয়ের মরদেহের পায়ের কাছে বসে সেদিন সম্মিলিত উচ্চ শোকের মাঝে গুনগুণ করে বড় মাসি একটা কথাই বলছিল মা আর মাসিদের, “আমি কি করব? কাল থেকে আমি কি নিয়ে থাকব? আমার তো আর কোন কাজ রইল না বল?”
আজ মহালয়ার পুণ্যপ্রভাতে কেন যে এদের জন্য এত মনখারাপ লাগছে? না যারা চলে গেছেন তাদের জন্য নয়, বরং যারা রয়ে গিয়ে প্রতিনিয়ত নিজের মৃত্যুকামনা করছেন তাদের জন্য। এই মনখুশি সোনালি রোদ, চকচকে নীল আকাশ আর মায়ের আগমনী তাদের জীবনকেও উজ্জ্বল করে তুলুক। উৎসবের আনন্দে ঝলমলিয়ে উঠুক সকলের জীবন। ভালোলাগা আর ভালোবাসার রেশ ছড়িয়ে পড়ুক ঘরের এবং মনের প্রতিটি কোনে, যেখানে অন্য সময় হয়তো সূর্যেরও প্রবেশ নিষেধ।

(চলবে গোটা পুজো জুড়ে, আশা করি)   

Wednesday 28 September 2016

lekha 3

Working in a nationalized bank has its toll, who understands it better than her, in the last seven/eight years she was transferred from Jhajjar Haryana to Junagarh Gujrat to Bilaspur Chattishgarh… finally she is posted in her home state but its almost 650 km from Kolkata. So what? She fell in love with this small hill town. Before/after duty hours she wanders alone through the deserted roads, through the partly dense forests. The denizens are too innocent to heckle a lonely woman. But today she is not feeling comfortable, as if she is not alone, somebody is watching her for sure. She looked around and found a big lens capturing her moves, must be a stupid Bong tourist is behind that. Getting furious she was about to leave the spot, when a familiar voice said, “Finally! Finally I got you!”
The man was smiling at her, for a moment or two she was dazed by his good looks… how many years 7/8/9 or 10? Oh my gosh!!! Its been so long since she’d last seen him… it’s like ages… but she still remembers…. She remembers everything…. He is her bestie’s cousin. When they first met, he was in his early 20s, a bright student. He was in 2nd or 3rd year of engineering degree. And she was in the wrong side of 20. It was her friend’s birthday where she first saw him… he was a tall, fair and lean boy, with newly and unevenly shaven beard and a pair of geeky glasses. The party ended really late that night and on her friend’s repeated request he walked her home… they talked, no actually he talked and she listened… she was so ordinary… so mediocre compared to him….but he treated her with too much respect…. She was actually started weaving dreams of future together, until he said, “Okay Di. Goodnight.”
“Di?” so he considered her as an older sister? But it failed to dissuade her from her stupid dreams…. Dreams of a colourful future together… she asked her friend a lot of questions about him,he had all the qualities of her prince charming…. She was totally engrossed into their dreamy future when she suddenly discovered that her Prince did have a princess… a far better looking, much younger girl, whose father is ten times wealthier than her father…. She was shattered…. But it was fair enough, a prince is supposed to be with a princess… only with a princess not a commoner like her. She made up her mind and concentrated on her career…. On the night of her friend’s engagement she witnessed them, her Prince and his Princess to break off… no she had nothing to do with it…. It’d been their decision…
It was her friend’s wedding, she met him for the last time…. Again on her friend’s repeated requests he went to drop her on foot, it was a full moon night, the roads were totally deserted…. They were alone… he hadn’t said anything, neither did she…. After bidding her goodbye…he suddenly called her, by her name, she had goose bumps but before he said anything she stepped into the house, looked into his eyes and said, “Goodnight Bro”.
He is visibly elated, hugged her so tight and kept on saying, “OMG! Where have you been? I searched you everywhere from FB to Twitter to Linkedin… ….”. Her heart is about to get blown… she tried to free herself and said, “ Listen Br”…. “Oh! Fuck it…. Im not your brother…..” he said angryly
#Aninditasblog
https://amianindita.blogspot.in

Lekha 2

He was married to someone else. So was she. They were colleagues.when they met he was in his late 30s and she was mid 40. He was overwhelmed with her simplicity.. the attraction was imminent. He made the first move, but met with resistance. To her falling for another man was a sin... she was quite content with her life. All she ever wanted was someone to talk to... husband, kids were too busy with their lives...

He stopped where she wanted him to... they become buddies... she talked talked and talked... he was such a good listener. He was her open window.

Days passed... they came closer... she met with an accident and lost her mother.... he wanted to drop in to her place... to console her... he wanted to hug her... wiping out every single drop of tears from her weeping eyes was all he wanted. But she refused to let him in... she called him a sexstarved animal.. all his feelings and emotions were branded as mere sexual desires. Otherwise why would a happily married man cherish feelings for other woman? She eventually blocked his no... he pleaded for one last hearing but she was adament.

Its been seven months since he quit the job and left the city... she was happy at the begining. But these days she wanders alone through the lonely streets where they used to wander together...touches the benches they used to sit and talk....relives every moment they spent together...she still loves her husband very dearly but something has changed.... yes deep down she misses him... his feelings were precious... those moments were priceless.

She unblocked his no in whatsapp but he last logged in seven months ago.... she tried to call him but phone was switched off... facebook was the last option but he deactivated his account long ago.
#Aninditasblog
https://www.facebook.com/amianindita.blogspt.in/

তুত্তুরী উবাচ


তুত্তুরী উবাচ ১৪ই জানুয়ারী ২০১৬
হ্যালো মামমাম্
হ্যাঁ  মা
তোমার মেয়েকে নিয়ে আর পার যায় না খালি বকে মারব বলে ভয় দেখায় সুযোগ পেলেই মারে
কেন রে? কিছু অপাট করোনি তো?”
না  ঐ আর কি মায়ের গয়নাগাটি গুলো সব ঢেলে আবার গুছিয়ে রেখেছি
কেন কর মা  মা রেগে যায়  আর কিছু করনি তো?”
নাঃ শুধু একটা টিউব লাইট ধড়াম করে ফেলে দিয়েছি
তা বেশ করেছ  যেমন তোমার হাতের কাছে রাখে
না ঠিক হাতের কাছে নয়, ঐ আর কি আলমারির ফাঁকে রাখাছিল
হুঁ  ব্যাস? আর কিছু করোনি তো?”
করেছি তো  মায়ের ঐ কি সব মুখে মাখার স্প্রে আছে না? ঐ গুলো তুলোয় দিয়ে ঘর মুছেছি
সর্বনাশ   তোকে আজ মা মেরেই ফেলবে
মায়ের লিপস্টিক গুলো খুলে দেখতে গিয়ে কি হল জানি না সব কটা ক্যাতক্যাত করছিল
উফ কি দুরন্ত মেয়েরে বাবা
আর মায়ের ল্যাপটপটায় কি সব টিপেছি, বাবা বলছে, ল্যাপটপটা মরে গেছে যাই হোক তাই বলে আমায় মারবে? তুমি এসে এখুনি তোমার মেয়েকে নিয়ে যাও

তুত্তুরি উবাচ- ২৬ শে জানুয়ারি ২০১৬
"মা, দুর্গা ঠাকুরের পায়ের  কাছে সবসময় একটা মোষ থাকে কেন?"
"মোষ? ও হ্যাঁ  মোষ তো থাকবেই, ওটা যে মহিষাসুরমর্দিনীরই মূর্তি মহিষাসুর তো মোষের ছদ্মবেশেই আক্রমণ করত গল্পটা বলেছি না?"
"হুঁ মর্দিনী মানে?"
" যে মর্দন অর্থাৎ বিনাশ করেছিল হত্যা করেছিল "
ক্ষণিক নীরবতার পর, “আমি কি মর্দিনী মা?”
তুমি তো আমার দশভূজা জগৎজননী
না আমি পিঁপড়েমর্দিনী আমি পিঁপড়ে মারি
প্রসঙ্গত জগজ্জননী নামটি ওর নিজের বেছে  নেওয়া  আমার চার চারটি নাতি নাতনী লকাই, সরো, কেতো এবং গণা কেতো আর গণা মহাপাজি  প্রায়শই তাদের মা রেগে গিয়ে তাদের জানলা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় লকাই, সরো স্কুলে পড়েদিদিমা অফিস থেকে ফিরলে, আগে মায়ের হোমওয়ার্ক, পরে মেয়েদের হোমওয়ার্ক যেদিন মা, দিদিমার হাতে ঠ্যাঙানি খায়, সেদিন লকাই সরোর কপালের দুঃখ থাকে তাদের মা সেদিন প্লাস্টিকের গদা নিয়ে তাদের হোমওয়ার্ক করাতে বসেন

তুত্তুরি উবাচ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
মা, আমি আর ঈশাণীর পাশে বসব না
কেন রে?”
ও বদ
কি করল আবার? ঈশাণী তো তোর প্রাণের বন্ধু এই সেদিন নিজের হাতে এঁকে তোকে গ্রিটিংস্ কার্ড দিল!!!”
হুঁ  কিন্তু আজ ওর দুলে হাত দিতে দেয়নিকি সুন্দর গোল গোল দুল পড়েছিল ভাবলাম একটু ঘুরিয়ে দেখি
সর্বনাশ নির্ঘাত কানে সদ্য ফুটো করেছে এই সময় খুব ব্যথা থাকে তারওপর সোনার দুল ধরে টানাটানি  করলে যদি হারিয়ে  যায়--”
হুঁ
ঝগড়া করেছো ? কি বলেছ?”
ক্ষণিক নীরবতার পরআড়ি  তোর পাশে আর বসব না সব সম্পর্ক শেষ
ওরে বাবা  সম্পর্ক শেষ তা বেশ  তবে যদি মন খারাপ করে, তাহলে কাল ঈশাণীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে নিও
কি চেয়ে নেব? দুল?”
না  না ক্ষমা রে বাবা  মানে সরি বোলো এন্ড গিভ হার আ টাইট হাগ
আঃ হাগ বোলো না সিংহগুলোও শিখে গেছে, এক্ষুণি ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে
উপস্ ভুলে গিয়েছিলাম, আমার কন্যা যে জগজ্জননী বাড়িতে সিংহ, ময়ুর, পেঁচা গিজগিজ করছে

তুত্তুরী উবাচ- ৬ই মার্চ ২০১৬ 
বারোটা বাজছে কিন্তু , এবার মুখ বন্ধ আর একটা কথা বললেই মারব
ইঃ শুধু মারব আর মারব  ওপাশ ফিরে আহ্লাদী স্বরে, “ বাবা? তোমার ব্যথাটা কমেছে?”
না  আছে একটু
এস আমি মা দুর্গার নাম লিখেদি ব্যথা কমে যাবে
তুই! মা দুর্গার নাম লিখবি?” হাসি চেপে গম্ভীর ভাবে বাবা বলল,“ বানান জানিস?”
হ্যাঁ জানি
কি বানান বল দেখি?”
জানি  কাল সকালে বলব এখন মা কথা বলতে নিষেধ করেছে

তুত্তরী উবাচ ১৪ই মার্চ ২০১৬
মা, দাদা কি বাজে কথা বলে!!”
আবার দাদা কি করল?”
নাঃ কিছু করেনি শুধু বলছিল ভূত বলে কিছু নেই
নেই ই তো  ঠিকই তো বলেছে
নেই?”
না
মানুষ মরে ভূত হয় না?”
উঁ হুঁ
ব্রহ্মদত্যি? মামদো? ছেঁছো ভূত?কিচ্ছু হয় না?”
নাঃ
শাঁকচুন্নী? পেত্নী?”
ধুস্
আর লুল্লু? একানড়ে ও হয় না?”
ধুর ধুর  ওতো ত্রৈলোক্য--- ”
হয় না তো?তাহলে তোমরা  কেন ভয় দেখাও? ঘুমিয়ে পড়ো না হলে এক্ষুনি একানড়ে এসে জানলায় ঠকঠক করবে? অ্যাঁ? বল? বল?”

তুত্তুরী  উবাচ ১৭ই মার্চ২০১৬

"মা, মা মনসা কি লাউ ডগার পিঠেও চাপে?"
"চাপতে পারে, এখন কাজের সময় বিরক্ত করো না  "
একটু পরেই প্রবল চিৎকার ,“ মনসা! তোর কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নেইঐ টুকু একটা লিকলিকে প্রাণীর পিঠে তুই চাপিস?”
প্রবল বকুনি  থামার পর আদুরে গলায় আব্দার, “ মা সরস্বতী শাড়ি ছিঁড়ে ফেলেছে ওকে একটা শাড়ি কিনে দেবে?”
বেশ দেব তা ওর কি একটাই শাড়ি?”
করুণ স্বরে লাল শাড়ি চাইছে মাহ্যাঁ একটাই শাড়ি  ওর বাবা তো শিব  গরীব লোক  গাঁজা খায়, সিদ্ধি খায় আর ধ্যান করে আমি বলেছি চিন্তা করিস না  মা কিনে দেবে
আচ্ছা তা মনসাকে এত বকলি কেন? ”
সব সময় সাপ নিয়ে ঘোরে  লক্ষ্মী ভয় পায় যে গোখরোর গায়ের রঙ তো হলুদ কালো,লক্ষ্মী ভাবে বাঘ এল বুঝি! ওমনি প্যাঁচায় চেপে উড়ে পালিয়ে যায়  হিঃহিঃ
জগজ্জননীর সংসার-

তুত্তুরী উবাচ ২৪শে মার্চ ২০১৬


  • “বাবা, লক্ষ্মী আর সরস্বতী বলছে ভোটের পর ঊনকোটি যাবে।”
  • “বাঃ তা যাওয়াই যায়।”
  • “আমি বলেছি না মরুভূমি দেখতে যাব। সেখানে সিংহটাকে বেশ বালির মধ্যে লুকিয়ে রাখা যাবে।”
  • “মরুভূমি! মানে রাজস্থান? ভেরি গুড।”
  • “বোকা গণেশটা বলছে মরুভূমিতে গিয়ে ঊটের জল খাবে।”
  • বাবা প্রায় বিষম খেয়ে, “ঊটের জল? মানে?”
  • “হ্যাঁ গো বাবা, ঊটের পীঠে একটা বিরাট জলের কি যেন থাকে, গণেশ বলছিল।”
  • “ওঃ ঊটের কুঁজ!!! সেটা থেকে শুধু ঊট জল খেতে পারে, তাও বিশেষ পরিস্থিতিতে। না হলে জল খেতে হলে ঊটটাকে কাটতে হবে। তাও পাবি না। ওটা চর্বি হয়ে জমে থাকে।”
  • “ঊটটাকে কাটতে হবে?” প্রচণ্ড ধমক দিয়ে, “ গণেশ! সাধে কি তোকে বোকা বলি? দিদিরা কবে পড়তে শিখে গেল। তুই এখনও অ আ লিখতে শিখলি না। দাঁড়া তোর শুঁড়টাই কেটে দেব। ” আমাদের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে, “চিন্তা করো না। শিব আবার জুড়ে দেবে।” কয়েক মুহূর্ত পরে স্বাভাবিক স্বরে, “ বাবা, গণেশ বলছে, সিংহটা বালি খুঁড়ে জল বার করে দেবে। কোন চিন্তা নেই। ”
তুত্তুরী উবাচ, ২৯শে মার্চ ২০১৬

  • "মা, রাবণের কটা হাত?গণেশ বলছে ওর নাকি দশটা হাত?"
  • "দুটোই তো জানি। "
  • "দশটা মাথা আর দুটো হাত? তাহলে রাবণ দাড়ি কামাতো কি করে?"
  • "উফ। কি প্রশ্নের ছিরি। যা বাবাকে জিজ্ঞাসা কর গিয়ে। "
  • "বাবা বল না? রাবণ কি করে দাড়ি কামাতো?"
  • "গুড কোয়েশ্চন। কামাত না। রাবণ মাকুন্দ ছিল। "
  • "মাকুন্দ মানে কি বাবা? "
  • "মাকে জিজ্ঞাসা কর?"
  • "মা মাকুন্দ মানে কি?"
  • "জানি না যা। সক্কাল সক্কাল কি সব অনাসৃষ্টি কথাবার্তা "
তুত্তুরী উবাচ, ২রা এপ্রিল ২০১৬

  • মা, বলছি যে, বাঁদর থেকে যেমন মানুষ হয়, মানুষ থেকে কি হয়?”
  • মানুষ থেকে?----- এখনও কিছু হয়নি।
  • হ্যাঁ হয় তো। মানুষ থেকে ভূত হয়মুচকি হেসে আহ্লাদী স্বরে, “ তুমি ভয় পেয় না। ভূত বলে কিছু হয় না। তোমাকে এপ্রিল ফুল বানালাম।
  • এপ্রিল ফুল? তারিখ রাতে এপ্রিল ফুল? সে তো পয়লা---”
  • সবার মন খারাপ ছিল যে--” (** ৩১ শে মার্চ বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের পতন)
তুত্তরী উবাচ ৩রা এপ্রিল ২০১৬


  • মা। মা। মহাসমস্যা হয়েছে।
  • কি করেছো?”
  • আমি না। বোকা গণেশ। খেলতে খেলতে বেগুনী রঙের বালতিতে পড়ে গেছে। এখন সাফ করবো কি করে?”
  • ওঃ এই। চান করিয়ে দে। 
  • সানলাইটের জলে চুবিয়ে, কলিন আর ডেটল দিয়ে ধোব? ” 
  • যা খুশি কর। আমায় কাজ করতে দাও আর খবরদার! কলিন, ডেটলে যেন হাত দিতে না দেখি।
  • একটু পরে,“ মা একটা দাড়িওলা ভগবানের নাম বল তো?”
  • কেন? গণেশের দাগ ওঠার সঙ্গে দাড়িওলা ভগবানের কি সম্পর্ক? যাই হোক একটাই তো জানি।
  • কি?”
  • প্রজাপতি ব্রহ্মা
  • কেন লোকনাথ বাবা।
  • ওঃ। উনি তো মানুষ হয়ে জন্মেছিলেন।
  • সে যাই হোক। পুজো তো করি।
  • আবার কিছুক্ষণ পরে, “ মা কোন সম্পর্ক নেই মানে কি?”
  • মানে- ইয়ে- কোন যোগাযোগ নেই। দুটো জিনিসের মধ্যে অনেক ভেবেও কোন যোগসূত্র না পাওয়া গেলে-”
  • ওঃ। বুঝেছি। যেমন মা লক্ষ্মী আর দিদি নং ওয়ানের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই?”
  • আঃ কি গাঁজাখুরি কথাবার্তা। আর একটাও প্রশ্ন নয়। সকাল থেকে বকেবকে--”
  • না সম্পর্ক আছে মা। দুটো একই চ্যানেলে হয়। দুর্গা আর বিগবস্ যেমন।
  • আর একটাও কথা নয়। সকাল থেকে বকে বকে মাথাখারাপ করে দিল- ”
  • বেশ। চলে যাচ্ছি শুধু বল গাঁজাখুরি মানে কি। 
  • তুত্তরী উবাচ ৪ঠা এপ্রিল ২০১৬
  • ট্যাক্সিওলাদের মতে উড়াল পুলের পতনের দৌলতে হাওড়া নাাকিপ্রায় দুর্ভেদ্য এয়ারপোর্ট থেকে ভিআইপি রোড ধরে কাঁকুড়গাছি হয়ে, ফুলবাগান, বেলেঘাটা স্পর্শ করে সুরেন ব্যানার্জী রোড হয়ে ধর্মতলা বাসস্টান্ডের মধ্যে দিয়ে কার্জন পার্ক হয়ে রেসকোর্সের পাশ দিয়ে রবীন্দ্র সেতু টপকে বেলেপোল দিয়ে ইছাপুর জলট্যাঙ্কে পৌছে করজোরে বললাম,“ দাদা অনেক হয়েছে কলকাতা ভ্রমণ আমাদের অনুগ্রহ করে এখানেই নামিয়ে দিন
  • পথে তুত্তরী উবাচ-
  • মা জানো তো আমাদের স্কুলে দুটো হিন্দু পড়ে!!!”
  • মানে? হিন্দু তো তুইও, ঈশানী, অদ্রিজা সবাই এতে আশ্চর্য কি আছে?”
  • আরে নানা হিন্দু না অন্য
  • সে আবার কি? আবার শুরু করেছিস গাঁজাখুরি গপ্প?”
  • আঃ মিস্ যখন বলে প্রেপ কপি বার কর, তখন কি আমরা বলি, নেহি হ্যায়?”
  • ওঃ হিন্দি তে কথা বলে
  • হ্যাঁ তাই তো বলছি হিন্দু
  • ওদের হিন্দিভাষী বলে
  • কয়েক মিনিটের নীরবতার পর, “ মা দাদু বলেছে মুখোশ কিনে রাখবে রাবণের মুখোশ কিন্তু পরব কি করে?”
  • উফ্ মুখোশ পরতে তুই জানিস না বুঝি? আগে যেন কখনত্ত পরিসনি?”
  • পরেছি তোচিন্তান্বিত হয়ে, “কিন্তু রাবণেরটা--- কি করে যে পরি? আমার তো আর দশটা মাথা নেই
  • উফ্ মুখোশে একটাই মাথা থাকে চুপ করে বসো তো আর একটাও কথা বোল না
  • পাঁচ মিনিটের নীরবতার পর ,“ উঃ বড্ড মশা ট্যাক্সিতে খালি কামড়ায়
  • কোথায় ? আমায় তো একটাও কামড়াচ্ছে না চুপ করে বস এত নড়ছ কেন?”
  • হুঃ আমার বোধহয় চুলকুনি হয়েছে মা ঈশ্ জানো তো জানোয়ার গুলো না গিয়ে গাছে গা ঘসে ওদের তো হাত নেই যে সঘস্ করে ইয়ে করবে মা, ওরা নাএক ঝলক ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে, স্বর নামিয়ে, “ ইয়ে করেও ইয়েটা গাছে ঘসে নেয় ইয়ে মানে বুঝলে কি না?”
তুত্তুরী উবাচ ১৪ই এপ্রিল ২০১৬
  • “আজ পয়লা বৈশাখ,সকাল সকাল পড়তে বসো। জান তো, আমাদের ছোটবেলায় কি বলত, আজ যা করবে সারা বছরই তাই করতে হবে।”
  • “তাহলে তো রোজ পড়তে বসতে হবে, ওরে বাবা আজ আমি কিছুতেই পড়ব না।”
  • “বেশ, তবে আজ ঠ্যাঙানি খেলে কিন্তু সারা বছরই-”
  • “এই শুরু হল। খালি মারব আর মারব। আমাকে কি সারা জীবন ঠ্যাঙাবে?”
  • “যত দিন বড় না হচ্ছ।”
  • “শোন মা, বাচ্ছাদের ঠ্যাঙাতে নেই। জান না শিশু নারায়ন! ছ বছর অবধি বাচ্ছারা নারায়ন থাকে, তারপর ছয় থেকে পনেরো তারা শিব হয়ে যায়, তখন তাণ্ডব করে।”
  • প্রবল হাসি চেপে, “এটা আবার কোথা থেকে আমদানি করলি?”
  • “হাওড়া থেকে। দাদু বলেছে, পনেরো বছরের পর চিত্রগুপ্ত খাতা খুলে পাপ পুণ্যের হিসেব টোকে। এখন তুমি যতই মায়ের লিপস্টিক নষ্ট কর আর দেওয়ালে ছবি আঁক, চিত্রগুপ্ত কিছুই লিখছে না।”
  • “যেমন তুই, তেমনি দাদু। একে রামে রক্ষে নেই -”

  • তুত্তুরী উবাচ ১৮ই এপ্রিল ২০১৬
  • - হ্যালো বুকু, বাড়ি পৌঁছেচ?
  • - বাড়ি না পৌছলে তোমার সাথে কথা বলতাম কি করে? 
  • - তাও বটে! তা আজ স্কুলে কি শিখলে?
  • - আজ হাঁসজারু আর বকচ্ছপের বিয়ে হবার কথা ছিল, ওমা গিয়ে দেখি ঘোড়াহাতি আর টিয়াবুলবুলির বিয়ে হচ্ছে
  • - গল্প বটে কিছু বানাতে পারো তুমি ঘোড়াহাতি আর টিয়াবুলবুলি আবার কোথায় পেলে? পড়াশোনা কি করলে?
  • - মা তুমি আজ শাড়ি পরে গেছ তো?
  • - এই গরমে শাড়ি? 
  • - তুমি এত শাড়ি পড়তে কেন অপছন্দ কর বলতো? জগৎজননীর মা তো শাড়িই পরে নাকি?
  • - হু সে সত্য যুগে পরতো
  • - জানো তো মা দুর্গা আমায় কাল কি বলেছে? বলেছে, আমি যেমন স্বর্গের দুর্গা, তুই তেমনি মর্তের দুর্গা তোর মা যদি তোকে মারে, আমায় বলিস, আমি তোর মাকে অভিশাপ দিয়ে দেব
  • - হাঁ, মা দুর্গা আমায় বলেছে, ওটা একটা বাঁদর, ওকে মানুষ করতে হলে, হাত খুলে ঠ্যাঙাবি
  • - (চিন্তান্বিত হয়ে) মা দুর্গা আবার তোমায় কখন বলল? তুমি ভুল শুনেছ
  • - না ঠিকি শুনলাম তো
  • - না না তুমি ভুলে গেছ কালই বাবাকে বলছিলে না, আজকাল সব ভুলে যাও
তুত্তুরী উবাচ এপ্রিল ২০১৬

  • -মা, ছাগল কে কাজল পরাতে পারবে?
  • - উফ ভগবান।
  • -কোন ভগবানকে ডাকছ? আচ্ছা মা, অভিযোগ করাটাকে তো কমপ্লেন করা বলে, যেটা খায় সেটাকে কি বলে গো?
  • - কমপ্লান!
  • - কমপ্লান?
  • - হুঁ
  • - খালি কমপ্লান করো।কমপ্লান করো। হরলিক্স করো হরলিক্স করো। মাঝে মাঝে বোর্ণভিটা তো করতে পারিস লক্ষ্মী। (গলা নামিয়ে) জানো তো মা লক্ষ্মীটার খালি নালিশ আর অভিযোগ, কান ঝালাপালা হয়ে গেল
তুত্তুরী উবাচ ২২শে এপ্রিল ২০১৬

  • -      ওমা, দেখ দেখ কি সুন্দর পতাকা নিয়ে যাচ্ছে।  চল না আমরাও ওদের সাথে হাটি।
  • -      ঐ রঙের পতাকাধারীদের সাথে হাঁটলে আর বাবার আমার চাকরী থাকবেনা বাবু।
  • -      কেন? আমিও ভোট দেব মা।
  • -      তোমাকে ভোট দিতে দেবে না।
  • -      কেন? আমি মা লক্ষ্মী চিহ্নে ছাপ দেব মা।
  • -      ঐ সব চিহ্ন হয় না বাবু। আর তোমার আঠারো বছর বয়স না হলে তোমায় ভোট দিতে দেবে না।
  • -      সেদিন যে বললে আঠারো বছর না হলে বিয়ে করতে দেয় না? ভোটও দিতে দেয় না?
  • -      না।
  • -      যাঃ। তুমি কিছু জান না, আমি ভোট দিতে গিয়েছিলাম তো দাদুর সাথে। দাদু শুধু একটা বোতাম টিপল। বোতাম টেপা আর কি শক্ত মা? আমিও পারব। জান তো ভোট দিলে নেলপালিশ পরতে দেয়! আগের বার হাওড়ায়, দাদুকে যখন পরাচ্ছিল, দাদু বলাতে লোকটা আমাকেও পরিয়েছিল।
  • -      বেশ।
  • -      আচ্ছা মা, বোতাম টেপার আওয়াজে কি বোঝা যাবে, যে আমি কোন চিহ্নটা টিপলাম?
তুত্তুরী উবাচ ২৪শে এপ্রিল ২০১৬

-      মা, মা লক্ষ্মীর ছেলের নাম কি গো ?
-      মা লক্ষ্মীর ছেলে-মেয়ে আছে কি না জানি না। নেই সম্ভবত। আমাদের বাড়ির লক্ষ্মী পুজোয় লক্ষ্মী- নারায়নের সাথে কুবেরের মূর্তি গড়া হয় বটে, তবে কুবের লক্ষ্মীর নিজের ছেলে নয়।
-      সেকি? লক্ষ্মীর বিয়ে হয়েছে, অথচ--, ব্যাপারটা তো ভাল নয়?
-      বিয়ে হলেই বাচ্ছা হতে হবে? তুই তো দাদুর পিসিমাদের মত কথা বলছিস!
-      হ্যাঁ। যেমন আমি, তোমার বিয়ে হয়েছে, তারপর আমি হয়েছি।
-      শোন বুকু, বিয়ে হলেও বাচ্ছা নাও হতে পারে, আবার বিয়ে না হলেও হতে পারে। এটা বাবা এবং মায়ের ইচ্ছা। কর্ণের গল্প ভুলে গেলে?
-       কর্ণ বলতে মনে পড়ল, মা, সূর্য দেবের গোঁফ থাকে? না দাড়ি থাকে?
-      জানি না। যত ফালতু প্রশ্ন। তবে গোঁফ দেখেছিলাম মনে হচ্ছে কোন একটা ছবিতে।
-      গোঁফ দাড়ি তো কেবল রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর আর ব্রহ্মার ছিল বলো।
-      আঃ। কিসের সাথে কি। সকাল থেকে খালি ঠাকুর আর দেবতা, পাগল করে দিল।
-      আচ্ছা মা, কি করলে যেন, কালীঘাটের কুকুর হয় গো?
-      এটাই শেষ প্রশ্ন তো?কাউকে কিছু দিয়ে ফেরত নিলে।
-      কেন? কুকুর হব কেন? আমার কাউকে ভাল লাগল, ভালবেসে কিছু দিলাম, কাল রাগ হল, ফেরৎ নিতেই পারি।
-      (পাশ থেকে বাবা সহাস্যে) ঠিক বলেছিস। কাউকে কিছু দিস না।
-      (বাবার দিকে ফিরে) বাবা আর কি করলে পুরির কুকুর হয়?
-      (বাবা গম্ভীর স্বরে) রাতে না ঘুমোলে।
-      আঃ। ঘুম পেলে তবে তো ঘুমোব। বলো না, কি করলে বৃন্দাবনের কুকুর হয়?
-       রাতে না ঘুমোলে।
-      আর কাশীর?
-      রাতে না ঘুমোলে।
-      ধুৎ। তুমি জান না, মাই ভালো।

তুত্তুরী উবাচ ২৯শে এপ্রিল ২০১৬
  • - মা, মাসি একটা মন্ত্র শিখিয়েছে, শুনবে?
  • - না! রাত বারোটায় আমি কোন মন্ত্রতন্ত্র শুনতে রাজি নই।
  • -শোনই না।
  • - মন্ত্র পড়লে কি হবে? বকবক বন্ধ হবে? ঘুম আসবে?
  • - না। তবে সাধুবাবার স্বপ্ন দেখবে।
  • - আমি কোন সাধুসন্তর স্বপ্ন দেখতে চাই না।
  • - আঃ শোনোই না।
  • - না বলে ছাড়বি না যখন অগত্যা -
  • - সাধুবাবাজী দুটো মুরগী পুষেছি,
  • মুরগী দুটোর নাম রেখেছি গরম পেঁয়াজী। হিঃ হিঃ হিঃ
  • - মাগো। ঈশ্। ছিঃ। ওয়াক্।এটা কি? কি জঘন্য জিনিসপত্র শিখিস।
  • তুত্তুরী উবাচ ৮ই মে২০১৬
  • -(সাংঘাতিক গম্ভীর স্বরে)ভয়ানক রকমের দেব চমকে,
  • ভয় পেয়ে তুই যাবি ব্যোমকে।
  • -( বাবার তালে তাল মিলিয়ে, ততোধিক গম্ভীর স্বরে)হঠাৎ করে মুণ্ডুটা তোমার ঘচ্ করে ফেলব কেটে।
  • - এসব কি হচ্ছে রে সাতসকালে?
  • - উফ্ মা। একটু গান গাইতে ও দেয় না।
  • - এটা গান!!! হে ভগবান্ আজ যে ২৫শে বৈশাখ।